
ভারত-পাক সীমান্তে (খাভড়া সীমান্ত) আদানি গোষ্ঠীকে প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া নিয়ে সংসদে প্রশ্নের মুখে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। ফের একবার মোদী-আদানির 'মিত্রতা' নিয়ে সরব হলেন কংগ্রেস সহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয় যে, দুপুর ২টো পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা।
বৃহস্পতিবার লোকসভার অধিবেশন শুরু হতেই কংগ্রেস সহ বিরোধী দলের সদস্যরা এই বিষয়টি উত্থাপন করতে চাইলে, স্পিকার ওম বিড়লা তাঁদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংসদের কার্যক্রম ব্যাহত করা উচিত নয় এবং সংসদের ঐতিহ্য বজায় রাখা প্রয়োজন। কিন্তু বিরোধীদের বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায়, মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। তবে আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সুবিধার্থে গুজরাটে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পার্ক তৈরির জন্য সীমান্ত সুরক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করেছে কেন্দ্র সরকার। এই পদক্ষেপ জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। যা বিজেপি সরকারের বড় শিল্পগোষ্ঠীগুলোর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট নীতির আরও একটি উদাহরণ।
নিজের এক্স মাধ্যমে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে লেখেন, "ছদ্মবেশী জাতীয়তাবাদীদের মুখোশ ফের খুলে গেছে। কোটিপতিদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে খেলা করছেন"।
তিনি আরও প্রশ্ন করেন, "আপনারা কেবল ভারত-পাক সীমান্ত নয়, বাংলাদেশ, নেপাল, চীন এবং মায়ানমার সীমান্তেও এমন নিয়ম চালু করেছেন! এটা কি সত্যি নয়? এর ফলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। যখন লাদাখে চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ২০ জন বীর সেনা শহিদ হলেন তখন আপনিই (নরেন্দ্র মোদী) বলেছিলেন, আমাদের ভূখণ্ডে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি"।
কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, "দেশের সমস্ত সম্পদ প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুর হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সীমান্তের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ম বদলে ফেলা হচ্ছে!"
কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, "এই চুক্তি নিয়ে কোনও কৌতূহল নেই। এটাই ছিল গেমপ্ল্যান। মোদি হ্যায় তো আদানি হ্যায়"।
এক বিদেশি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পরই সরব হয়েছে বিরোধীরা। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে বিজেপি সরকার আদানি গোষ্ঠীকে গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়। ওই বছর এপ্রিল মাসে দিল্লিতে আয়োজিত এক বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অনুমতি দিয়েছিল প্রকল্পটি চালু করার জন্য। যেটি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে মাত্র ১ কিমি দূরে। প্রকল্পের লক্ষ্য ওই অঞ্চলে সৌরশক্তি ও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এর ফলে ওই এলেকায় ৪৪৫ বর্গ কিলোমিটার জমিও পেয়ে গিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
ওই সংবাদপত্রের প্রতিবেদন সূত্রে খবর, এর আগে সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও বড় নির্মাণের বা প্রকল্পের অনুমতি দেয়নি কেন্দ্র। কিন্তু ২০২৩ সালে গুজরাট সরকার কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে সীমান্ত সংক্রান্ত নিয়মে কিছু ছাড় দেওয়ার অনুরোধ জানায়। মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে সীমান্ত থেকে ১-২ কিলোমিটার দূরে টারবাইন স্থাপনের অনুমতি দেয়। পাশাপাশি সীমান্তের ২ কিলোমিটার থেকে ৮ কিলোমিটারের মধ্যে হাইব্রিড পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্ল্যান্ট স্থাপনেরও অনুমতি দেয় কেন্দ্র।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন