প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বেঙ্গালুরু সফরকালে সারাইকৃত রাস্তার অবস্থা বেহাল হওয়ায়, তা নিয়ে জাতীয় স্তরে চর্চা শুরু হয়েছে। বেঙ্গালুরু নাগরিক সংস্থা, ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকা (BBMP) এবং বেঙ্গালুরু উন্নয়ন পর্ষদ (BDA)-এর কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র।
একইসঙ্গে, আসরে নেমেছেন বেঙ্গালুরু দক্ষিণের বিজেপি সভাপতি এন. আর. রমেশ। শনিবার তিনি সংবাদ সংস্থা আইএএনএসকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরকালে রাস্তার কাজের তথ্য চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে RTI করেছেন তিনি। রমেশ বলেন, ‘একবার হাতে তথ্য আসুক, তারপর আমি নিজেই দায়ী কর্তৃপক্ষ, কর্মকর্তা এবং জড়িত বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করব। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে।’
সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে রাস্তা সারাইয়ের সময় কোনও গাইড লাইন মানেনি ঠিকাদাররা। অভিযোগ উঠেছে, খরচ কমাতে রাস্তার কাজে ইমালশনের পরিবর্তে কেরোসিন ব্যবহার করেছে তাঁরা। এমনকি, ১১০ থেকে ১৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যে বিটুমিন ব্যবহার করার পরিবর্তে, তা ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে রাখা হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের বিষয়টি দেখার হলেও, তারাও তা এড়িয়ে গেছেন।
জানা যাচ্ছে, প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তার কাজ হলেও রাস্তায় কোনও ফাটল বা গর্ত হয় না, যদি সঠিক মাত্রায় ইমালসন ব্যবহার করা হয়। সেইসঙ্গে, উপযুক্ত তাপমাত্রায় রাস্তার বিটুমিন তৈরি করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের একদিন পরেই সারাইকৃত রাস্তার বেহাল অবস্থার খবর সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাইয়ের কাছ থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (PMO)।
দলের সুত্রে খবর, এই খবরে বিরক্ত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ, সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। তবে, এই ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে ৪০ শতাংশ কমিশন নেওয়ার অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস।
দলের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকা (BBMP) কমিশনারকে ‘সারাইকৃত রাস্তার বেহাল অবস্থা’ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বোমাই।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর ডক্টর বি আর আম্বেদকর স্কুল অফ ইকোনমিক্স (BASE)-এর ক্যাম্পাস-সহ সংলগ্ন রাস্তার উদ্বোধন করেন মোদী। সেটিও খারাপ হতে শুরু করেছে। তাই, নিম্নমানের কাজের জন্য তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য BBMP- কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী।
এরইমাঝে কর্ণাটক হাইকোর্টেও ধাক্কা খেয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। বেঙ্গালুরু পুর কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে হাইকোর্ট বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি সফর করলে তবেই রাস্তাগুলির অবস্থার উন্নতি হবে। আদালত প্রশ্ন তুলেছে, ‘কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে তাহলে কি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিবারই রাস্তা ভ্রমণ করতে হবে?’
গত সোমবার একদিনের বেঙ্গালুরু সফরে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে জন্য শহরজুড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত করা হয়। খরচ করা হয় ২৩ কোটি টাকা। কিন্তু, এক দিন না পেরোতেই সেই রাস্তার অবস্থা আবার বেহাল হয়েছে।
অর্থের অভাবে উন্নয়ন করা যাচ্ছে না বলে প্রায়শই দাবি করে থাকে ব্রুহাত বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকা (BBMP)। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর একদিনের সফরের জন্য তাঁরা এই বিপুল পরিমান অর্থ খরচ করেছে। এ নিয়ে BBMP-র সমালোচনায় সরব স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপর আবার মেরামতকৃত রাস্তা থেকে খসে পড়েছে উন্নয়নের চিহ্ন।
জানা যাচ্ছে, সারাইকৃত রাস্তার উপর খাদ তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ভেঙে পড়েছে রাস্তার কিছু অংশ। সমস্যায় পড়েছে সাধারণ মানুষ। রাস্তা সংস্কারের সময় এলাকার অনেক মানুষ উচ্ছ্বাসিত ছিলেন, এখন তাঁরা আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন।
BBMP-এর তথ্য অনুসারে, কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কের প্রায় ২.৪ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ২ কোটি ৬০ হাজার টাকা, তুমাকুরু রোডের ০.৯ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা, ব্যাঙ্গালোর বিশ্ববিদ্যালয় রোডের ৩.০৬ কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৬ কোটি ৫০ হাজার টাকা, ০.১৫ কিলোমিটার মৈসুর রোডের জন্য ৩৫ লক্ষ টাকা, কোমঘট্টা রোডকে আর ৭ কিলোমিটার প্রসারিত করার জন্য ১১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়।
প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বৃষ্টির মাঝেও এই মেরামতের কাজ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের আগে পর্যন্ত এই রাস্তাগুলিতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তুলেছে, সারাইকৃত রাস্তা থেকে পাথর উঠে যাচ্ছে, গর্ত তৈরি হয়েছে।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।