এখন আসামের বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির পথে। মঙ্গলবারের (২৮জুন) খবর অনুযায়ী জানা যায়, কাছাড় জেলার, শিলচর শহরের বেশিরভাগ এলাকা এখনও প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জলের তলায় রয়েছে।
আসাম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (ASDMA) -এর তরফে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৫ জনের মৃত্যুর খবর। এই বছর বন্যার কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩৪ জন এবং একজন নিখোঁজ হবারও খবর পাওয়া গেছে।
নগাঁও এবং বরাক উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কপিলি এবং বরাক নদী। ইতিপূর্বে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এই নদীগুলি। আপাতত বরাক ও কপিলিসহ বেশিরভাগ নদীতেই জলোচ্ছ্বাস হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বাজালি জেলার একটি ভেঙে যাওয়া বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। ট্যুইটে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মী শ্রী রঞ্জিতকর দাসের সাথে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি এবং কালদিয়া নদীতে ঘটে যাওয়া জলোচ্ছ্বাস ও ক্ষয়ক্ষতি বোঝার চেষ্টায় বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেছেন। সেদিন তিনি বন্যাক্রান্তদের সাথেও দেখা করেন। কথাবার্তা বলে তাদের সম্ভাব্য সমস্ত সহায়তার আশ্বাস দেন। শিলচর প্রায় এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জলের তলায় ছিল (এখনও আছে বেশ কিছু অংশ)। যেসব বন্যাক্রান্তদের কাছে এখনও পৌঁছানো সম্ভব হয়নি তাদের কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে এয়ারড্রপ করার প্রচেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, বেথুকান্দি'র ক্ষতিগ্রস্থ অংশগুলি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। যা এই শহরে বন্যার কারণ হিসাবে মনে করা হচ্ছিল। মুখ্য সচিব জিষ্ণু বড়ুয়া একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে বলেন, কাছাড় জেলার সমস্ত পুনর্বাসন মূল্যায়ন ও অনুদানের বিষয় ১০ই জুলাইয়ের আগে শেষ করতেই হবে।
আসাম বন্যায় সর্বমোট ২২৫৪ টি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে প্রায় ২ লক্ষ লোককে ৫৩৮ টি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া গেছে। বন্যার জলে ৭৯ টি সড়ক ও পাঁচটি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ছয়টি বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বন্যায় মোট ৩৪৯ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৫৭৩ টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৪,৬৫৬ হেক্টরের বেশি কৃষিজমি জলের নিচে অবস্থান করছে।
হাজার তিনেক বন্যপ্রাণী বন্যার জলে ভেসে গেছে। বারপেটা, বোঙ্গাইগাঁও, চিরাং, হাইলাকান্দি, মরিগাঁও, নলবাড়ি, সোনিতপুর এবং উদালগুড়ি জেলায় ব্যাপক ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। হাইলাকান্দি জেলার একটি চা বাগানেও ভূমিধ্বসের খবর পাওয়া গেছে।
হাইলাকান্দি জেলার ডেপুটি কমিশনার কীর্তি জল্লি বলেছেন যে, ASDMA শিলচরের ক্ষতিগ্রস্ত রেলওয়ে স্টেশন এবং অন্যান্য জায়গাগুলির ক্ষতির মূল্যায়নের জন্য ড্রোন সমীক্ষা শুরু করেছে। শিলচর পৌরসভা বোর্ডের সাথে জেলা প্রশাসন হাতে হাত দিয়ে কাজ শুরু করেছে এবং অন্যকর্মীরা শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য কাজ করছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে, সাধারণ মানুষ তাদের বাড়ি এবং দোকান পরিষ্কার করার পরে রাস্তায় ময়লা ফেলছে। ফলে নিকাশি ব্যবস্থায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি মানুষকে রাস্তায় আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। শহরের ২৮টি ওয়ার্ডে চিকিৎসাকর্মীও মোতায়েন করা হয়েছে।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।