একসঙ্গে দুটি বড় ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবার চোখ এখন আসামে। এক, মহারাষ্ট্রে ক্ষমতা দখলের জন্য বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের গুয়াহাটির হোটেলে আশ্রয় নেওয়া। অন্যটি হল, বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক লক্ষ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই।
গত এপ্রিল মাস থেকে বন্যায় রাজ্যের ২৮টি জেলার প্রায় ৩৩ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা এবং ভূমিধসে মৃত্যু হয়েছে ১১৭ জনের। বন্যার জেরে পানীয় জলের সমস্যায় পড়েছে রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর শিলচরের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ।
আর আসামের এই প্রাকৃতিক সংকটের মাঝে, মহারাষ্ট্রের নয়া রাজনৈতিক সংকট নিয়ে হাজির হয়েছে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কেরা। গুয়াহাটির রেডিসন ব্লু হোটেল হয়ে উঠেছে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন জোটের বিরুদ্ধে লড়াই কেন্দ্রবিন্দু।
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী একনাথ সিন্ধে দাবি করছেন, তাঁর সঙ্গে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক রয়েছেন। মহারাষ্ট্রের জোট সরকারকে ভেঙে দেওয়ার হুমকি তিনি আসাম থেকেই দিচ্ছেন।
যদিও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, গুয়াহাটির হোটেলে বিদ্রোহী শিবসেনা বিধায়কদের অবস্থানের সঙ্গে তাঁর সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি শিবসেনার অভ্যন্তরীণ লড়াই। কিন্তু, হোটেলে বিদ্রোহী সেনা বিধায়কদের সঙ্গে সে রাজ্যের মন্ত্রী ও বিজেপি নেতাদের দেখা গেছে, যা অন্যকিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জানা যাচ্ছে, আসামের বন্যা পরিস্থিতিতে রাজ্যের অনেক মানুষই হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। শিলচরের এক বাসিন্দা বিক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আসাম ডুবে যাচ্ছে আর মহারাষ্ট্র থেকে মন্ত্রীদের এখানে এনে ঘোড়া কেনাবেচার জন্য পাঁচ তারকা হোটেলে রাখা হচ্ছে? এটাই কি আসাম সরকার?’
অন্য আরেক ব্যক্তি বলেন, জলমগ্ন পরিস্থিতির কারণে রাজ্যের অনেক জায়গায় মানুষ বাড়িতে আটকে রয়েছে। সে জায়গাগুলি পরিদর্শন করতে অবশ্যই বিশ্বশর্মাকে যাওয়া প্রয়োজন। তিনি জানান, ‘আমরা চাই, মুখ্যমন্ত্রী এখানে এসে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করুক। বন্যার কারণে এখানে অনেক মানুষ আটকা পড়েছে। তার এখনই তাদের সাহায্য করা দরকার। অনেক মানুষই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে যেতে পারছে না।’
শনিবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকারের বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে কংগ্রেসসহ একাধিক দল। তাঁরা দাবি জানিয়েছে, মহারাষ্ট্রের বিধায়কদের ফেরত পাঠিয়ে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মনোনিবেশ করুক সরকার।
তবে, বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, ‘রাজ্যের কিছু অংশে বন্যার কারণে আমি কি গুয়াহাটির হোটেল বন্ধ করে দেব? আমরা পর্যটন শিল্পের প্রচারের জন্য অনেক টাকা খরচ করেছি। যারা আসামে আসতে চান, তাদের কি আমি বাধা দেব?’
আসামে বন্যা কবলিত একালায় জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল কাজ করছে। কিন্তু, তা যথেষ্ট হচ্ছে না। বেশিরভাগ জায়গায় খাদ্য ও ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।