মধ্যরাতে কাজিরাঙ্গা জাতীয় পার্কে ভ্রমণ করে আইন লঙ্ঘন করেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, পর্যটন মন্ত্রী জয়নতা মাল্লা বড়ুয়া এবং আধ্যাত্মিক গুরু জগ্গি বাসুদেব ওরফে সদগুরু। এই অভিযোগ তুলে, সোমবার, তিনজনের নামে গোলাঘাট জেলার বোকাখাত থানায় FIR দায়ের করেছেন পরিবেশ ও প্রাণী অধিকার কর্মীরা।
সরকারী উদ্দ্যোগে ৩ দিনের চিন্তন শিবিরে যোগ দিতে আসাম এসেছেন আধ্যাত্মিক গুরু জগ্গি বাসুদেব। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই রবিবার রাতে, কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানে ‘সাফারি’ (গাড়ি ভ্রমণ) করেন বিশ্বশর্মা। এই ঘটনায় ‘বন্যপ্রাণী (সুরক্ষা) আইন, ১৯৭২’ (Wildlife Protection Act, 1972) লঙ্ঘিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অ্যাক্টিভিস্ট সোনেশ্বর নারাহ এবং প্রবীন পেগু।
অ্যাক্টিভিস্ট সোনেশ্বর নারাহ বলেন, ‘বিশ্ব বিখ্যাত এই উদ্যানকে রক্ষার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন কাজিরাঙ্গার আশেপাশের গ্রামবাসীরা। তাঁদের অনেক গৃহপালিত পশুকে হত্যা করেছে বন্য বাঘ, হাতি এবং অন্যান্য প্রাণীরা।'
তাঁর কথায়, বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন ‘লঙ্ঘন’ করার দায়ে অনেক মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে ‘বন ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা’। কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অনেক লোককেই।
এরপরেই এই কর্মী বলেন, 'বিকেল চারটার পরে কাজিরাঙায় সাফারি করা যায় না। এই নিয়ম ভেঙেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। রাতে ওই সময়ের পরে সাফারি করেছেন। আইন যদি সবার জন্য সমান হয়, তবে নির্ধারিত সময়ের পরে জাতীয় উদ্যানের ভিতরে সাফারি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী, সদগুরু এবং পর্যটন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
আরেক পরিবেশ ও প্রাণী অধিকার কর্মী অপূর্ব বল্লভ গোস্বামী বলেন, 'এটি খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, সদগুরুর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির 'বন্যপ্রাণীর প্রতি কোন সংবেদনশীলতা নেই।''
তবে, আসামের প্রধান বন সংরক্ষক এম কে যাদব জানিয়েছেন, 'যেহেতু বন বিভাগ সদগুরু এবং মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, তাই এটা বলা ভুল যে সদগুরু ও মুখ্যমন্ত্রী পার্কে প্রবেশ করেছিলেন এবং গভীর রাতে সাফারি উপভোগ করেছিলেন।'
এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'কোনও আইনভঙ্গ করা হয়নি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে, সংরক্ষিত জায়গাতে রাতেও প্রবেশ করার অনুমতি দিতে পারেন প্রহরীরা। কোনও আইন রাতে কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে বাধা দিতে পারে না।'
প্রসঙ্গত, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি একশৃঙ্গ গণ্ডার পাওয়া যায় অসমের কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে। বিশ্বের মোট একশৃঙ্গ গণ্ডারের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পাওয়া যায় কাজিরাঙ্গা জাতীয় পার্কে। কাজিরাঙ্গা জাতীয় পার্কে আছে মোট ২,৬১৩টি একশৃঙ্গ গণ্ডার।
তবে, শুধু গণ্ডার নয়, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এশিয়ান হাতি, বন্য মহিষ সহ ১২৫ প্রজাতির হাজার হাজার পাখির আবাসস্থল হল কাজিরাঙ্গা অভয়ারণ্যে। এটি আসামের পাঁচটি জেলা - গোলাঘাট, নগাঁও, সোনিতপুর, বিশ্বনাথ এবং কার্বি আংলং জুড়ে বিস্তৃত।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।