

লখনউয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভুলবশত প্রস্রাব হয়ে যাওয়ার অপরাধে এক প্রৌঢ় দলিত ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠল আরএসএস কর্মীর বিরুদ্ধে। এমনকি ওই প্রৌঢ়কে নিজের প্রস্রাব চাটতে বাধ্য করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। অন্যদিকে, বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশেও দলিত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এক যুবককে অপহরণ করে তাঁকে নির্মমভাবে মারধর। এমনকি জোর করে তাঁকে প্রস্রাব খেতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীনে রয়েছে যুবক।
সোমবার লখনউয়ের কাকোরির শীতলা মাতা মন্দিরের ঘটনা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত দলিত ব্যক্তি রামপাল হাটা হাজরত সাহিব এলাকার বাসিন্দা। দীর্ঘদিন ধরেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণেই তিনি অনিচ্ছাকৃতভাবে মন্দিরের আঙিনায় প্রস্রাব করে ফেলেন।
জানা গেছে, এর কিছু সময় পর স্থানীয় বাসিন্দা স্বামীকান্ত ওরফে পাম্মু সেখানে এসে রামপালের ওপর চড়াও হন। যিনি নিজেকে আরএসএস কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পাম্মু পাম্মু ওই বৃদ্ধকে বেধড়ক মারধর করেন, জাতিগত অপমানসূচক গালিগালাজ করেন এবং শেষে তাঁকে নিজের প্রস্রাব চাটতে বাধ্য করেন। এমনকি পরে মন্দিরের মেঝে ধুয়ে দিতে বলেন শুদ্ধিকরণের জন্য।
এরপর নির্যাতিত রামপাল কাকোরি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার বিষয়ে কাকরি অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার শাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধি ও তফসিলি জাতি ও তফসিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনের প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।”
এই ঘটনা সামনে আসতেই স্থানীয় মানুষ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা একে 'মানবিক মর্যাদার চরম লঙ্ঘন' বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। উপযুক্ত প্রমাণ যাচাইয়ের পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, আরেক বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশেও দলিত নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত যুবক পেশায় গাড়িচালক। তিনি আগে ভিন্দের বাসিন্দা সোনু বারুয়ার গাড়ি চালাতেন। কিছুদিন আগে তিনি সেই কাজ ছেড়ে গোয়ালিয়রে শ্বশুরবাড়ি চলে যান।
অভিযোগ, তিন দিন আগে সোনু বারুয়া, অলোক পাঠক এবং ছোট্ট ওঝা তাঁর শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে পুরনো কাজের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ওই যুবক রাজি না হওয়ার তাঁকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
ওই যুবকের আরও অভিযোগ, ভিন্দে যাওয়ার পথে তাঁকে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়, জোর করে মদ খাওয়ানো হয় এবং তারপর তাঁকে প্রস্রাব পান করানো হয়। একাধিকবার এই নৃশংস কাজের পর তাঁকে লোহার চেন দিয়ে বেঁধে আকুটপুরা গ্রামে সারারাত ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরের দিন কোনরকমে ওখান থেকে পালিয়ে যান নির্যাতিত। তাঁকে ভিন্দের জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও সেখানেই চিকিৎসা চলছে দলিত যুবকের।
ঘটনার খবর জানাজানি হতেই ভীম আর্মির সদস্যরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ইচ্ছে করেই দেরি করছে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে। তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে।
এদিকে বিক্ষোভের খবর পেয়ে রাজ্যের মন্ত্রী রাকেশ শুক্লা, ভিন্দের জেলা শাসক কিরোড়ি লাল মীনা এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় পাঠক হাসপাতালে যান। মন্ত্রী ভুক্তভোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন এবং বলেন, “দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত তিন জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
তবে মধ্যপ্রদেশে দলিতদের ওপর এমন নির্যাতন নতুন নয়। সম্প্রতি কাটনিতে বেআইনি খননের বিরোধিতা করায় এক দলিত যুবকের ওপর প্রস্রাব করার অভিযোগ ওঠে। তারও দুই বছর আগে সিধিতে এক আদিবাসী যুবকের গায়ে প্রস্রাব করার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন