
হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। আগামী বছরের শুরুতেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ফাটল বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে। 'ইন্ডিয়া' মঞ্চ থেকে কংগ্রেসকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছে আম আদমি পার্টি। জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’-র বাকি শরিক দলগুলির কাছে এই বিষয়ে বার্তা পাঠাতে শুরু করেছে কেজরিওয়ালের দল।
বুধবার দিল্লির কংগ্রেস নেতা তথা এআইসিসির কোষাধ্যক্ষ অজয় মাকেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে ‘ফর্জিওয়াল’ (জালিয়াতি) বলে কটাক্ষ করেছেন। মাকেন বলেন, ‘কেজরীওয়ালের কোনও মতাদর্শ নেই। তিনি রাজনৈতিক স্বার্থে বিজেপির ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধিকে সমর্থন করেছেন’।
কংগ্রেসের তরফ থেকে ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে গত এক দশকে আপের রাজত্বকালে দিল্লি দুর্নীতি এবং অনুন্নয়নের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। কেজরিকে আক্রমণ করে কংগ্রেসের প্রশ্ন, যে লোকপাল আন্দোলন করে কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল, সেই জনলোকপাল দিল্লি এবং পাঞ্জাবে কেন গঠন করা হয়নি?
কেজরিওয়ালকে ‘মিথ্যেবাদি’ অ্যাখ্যাও দিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ, যে সরকারি প্রকল্পের আদতে কোনও অস্তিত্বই নেই, সেই প্রকল্পকে শিখণ্ডী করেই নাকি কেজরিওয়াল দিল্লিবাসীকে বিভ্রান্ত করছেন! মাকেনের দাবি, ২০১৩ সালে কংগ্রেস আপকে সমর্থন করে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আজ তার ফল ভুগছে দিল্লি।
কংগ্রেসের এই মন্তব্য সামনে আসার পরই দুই শিবিরের মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এক সাংবাদিক সম্মেলনে আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং বলেন, মাকেন কেজরিওয়ালকে ‘দেশবিরোধী’ বলে অপমান করেছেন। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব অজয় মাকেনের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আপের তরফে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সঞ্জয় সিং বলেন, 'কংগ্রেসের অজয় মাকেন আসলে বিজেপির স্ক্রিপ্ট অনুসারে কথা বলছেন। যদি কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে, তাহলে আমরা 'ইন্ডিয়া' শরিকদের সঙ্গে কথা বলব, যাতে কংগ্রেসকে 'ইন্ডিয়া' থেকে বহিষ্কার করা হয়’।
সেই সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতিশী। তিনি বলেন, 'কংগ্রেসের আচরণেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়া সেরে ফেলেছে তারা। বিজেপির টাকায় কংগ্রেসের প্রার্থীরা ভোটে লড়ছেন। আমরা শুনেছি, কংগ্রেস প্রার্থী সন্দীপ দীক্ষিতের নির্বাচনী খরচ বিজেপিই দিচ্ছে’। অতিশীর প্রশ্ন, 'কংগ্রেসের যদি মনে হয় আমরা দেশবিরোধী, তাহলে গত লোকসভা নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে লড়াই কেন করল?’
লোকসভা নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ এক সঙ্গে লড়লেও, দিল্লির সবকটি আসনেই জেতে বিজেপি। তারপর থেকে কার্যত দুই শিবিরের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। এমনকি সেপ্টেম্বরে হরিয়ানা নির্বাচনে দু’দল আলাদা ভাবে লড়ে। দিল্লির নির্বাচনেও তারা যে কংগ্রেসের সাথে জোট বাঁধছে না, সেকথা আগেই জানিয়েছিলেন আপ প্রধান কেজরিওয়াল। ইতিমধ্যেই কেজরির বিরুদ্ধে কংগ্রেস নয়াদিল্লি কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ সন্দীপ দীক্ষিতকে।
আপ-এর এই দাবিতে ইন্ডিয়া-র বাকি শরিকরা সাড়া দেয় কিনা সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। এর আগে কংগ্রেসের সাথে দুরত্ব তৈরি করেছিল ইন্ডিয়া-র অন্য দুই শরিক তৃণমূল এবং সমাজবাদি পার্টি। এছাড়া, লালুপ্রসাদ, শরদ পাওয়ার, আদিত্য ঠাকরের মতো বিরোধী নেতারা এবং ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো ‘ইন্ডিয়া’র বাইরের দলও বিরোধী জোটের মুখ হিসাবে মমতাকে তুলে ধরার পক্ষে সওয়াল করেছেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন