
হরিদ্বারের পর এবার উত্তরপ্রদেশ। ঔশানেশ্বর মহাদেব মন্দিরে আচমকা পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বিদ্যুৎপৃষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে পুণ্যার্থীরা দৌড়দৌড়ি শুরু করেন। যার ফলে তৈরি হয় পদপিষ্টের পরিস্থিতি। এই ঘটনায় অন্তত দু'জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৪০-এরও বেশি। রবিবার হরিদ্বারের মনসা দেবী মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনার নেপথ্যেও ছিল বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়া নিয়ে আতঙ্ক এবং হুড়োহুড়ি। সেখানেও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চলছে শ্রাবণ মাস। সেই উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের বারাবঙ্কী জেলার হায়দরগড়ের ঔশানেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগেই আছে। সোমবার ছিল মন্দিরে বিশেষ পুজো। যার জেরে রবিবার রাত থেকেই পুজো দেওয়ার জন্য মন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন অনেকেই। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভোর ৩টে নাগাদ এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
জেলাশাসক শশাঙ্ক ত্রিপাঠী এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থায় জানিয়েছেন, "পুণ্যার্থীরা মন্দিরে পুজো দিচ্ছিলেন। সেই সময় আচমকা একটি বাঁদর বিদ্যুতের তারের উপর লাফিয়ে পড়ে। তারটি ছিঁড়ে মন্দিরের ছাউনির উপর পড়ে। ওই জায়গায় কারেন্ট ছড়িয়ে যায়। যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসা চলছে"।
স্থানীয় এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ওই সময় মন্দিরে মহাদেবের জলাভিষেক চলছিল। সেই সময় টিনের শেডের নীচে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আচমকা প্রচণ্ড শব্দ হয় এবং বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যায়। এরপর অনেকে বিদ্যুতের শক অনুভব করেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মৃত অন্তত দু'জন। ৪০-এরও বেশি লোক আহত হয়েছেন।
মৃতদের মধ্যে একজন ২২ বছর বয়সী প্রশান্ত। লোনিকাত্রা থানা এলাকার মুবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। অন্য একজনের পরিচয় জানা যায়নি। দু’জনেরই মৃত্যু হয়েছে ত্রিবেদীগঞ্জ কমিনিউনিটি হেল্থ সেন্টারে।
এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের তিনি ঘটনাস্থলে অবিলম্বে পৌঁছোতে বলেছেন এবং পুণ্যার্থীদের উদ্ধারকাজে হাত লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে। ঘটনাটি কেন ঘটল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অন্যদিকে, রবিবার হরিদ্বারের মনসা দেবি মন্দিরে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। পাহাড়ের কোলে অবস্থিত ওই মনসাদেবীর মন্দিরে শ্রাবণ মাসের প্রায় প্রতিদিনই ভক্তদের ভিড় থাকে। রবিবার সকালে ঘটে পদপিষ্টের ঘটনা। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩০ জন।
দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল ৯টা নাগাদ। তবে কী কারণে এই দুর্ঘটনা তা এখনও জানা যায়নি। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, গুজব ছড়ানোর কারণে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে। সে থেকেই এই দুর্ঘটনা। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ভক্তদের ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই ছড়িয়ে যায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। ভক্তরা আতঙ্কিত হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। তখনই বিপত্তি ঘটে। সিঁড়ির মধ্যে পড়ে যান কয়েক জন ভক্ত। তাঁদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আরও অনেকে একে অপরের গায়ের উপর পড়েন।
নিহতরা হলেন - আরুশ (১২), বিবেক (১৮), উত্তরপ্রদেশের ওয়াকিল এবং শান্তি, উত্তরাখণ্ডের বিপিন সাইনি (১৮) এবং বিহারের শাকল দেব (১৮)।
ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামি। স্থানীয় প্রশাসন এবং উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তিনি। সমস্ত রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। উত্তরাখণ্ড সরকার মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনাও করেছেন। ঘটনাটিকে 'গভীর বেদনাদায়ক' বলে অভিহিত করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন