'আধার নথি নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না!' বিহার SIR মামলায় কমিশনের সঙ্গে সহমত সুপ্রিম কোর্ট

People's Reporter: তবে কমিশনের এই বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন করার এক্তিয়ার রয়েছে কিনা, এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

"নির্বাচন কমিশনই ঠিক! আধার নথি নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না"। মঙ্গলবার বিহারের ভোটার তালিকার বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision - SIR) সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এই বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে সহমত পোষণ করল সুপ্রিম কোর্ট। তবে কমিশনের এই বিশেষ এবং নিবিড় সংশোধন করার এক্তিয়ার রয়েছে কিনা, এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। বুধবার ফের এই মামলার শুনানি।

মঙ্গলবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয় এই মামলার শুনানি। আধার নথি কোনও নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। আধার নথি প্রসঙ্গে নিজেদের আপত্তির কথা আগেই আদালতকে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এদিন কমিশনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চ।

এদিন শুনানির শুরুতেই কমিশনের এই প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানান আইনজীবী কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, বলেন, “একটি বিধানসভা এলাকায় ১২ জনকে জীবিত দেখানো হয়েছে। অথচ তাঁরা মৃত। আবার অন্যত্র জীবিত ভোটারদের মৃত বলে দেখানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “বিএলও-রা কী কাজ করেছেন? তাঁদের যাচাই কাজ সঠিক ভাবে হয়নি"। পাল্টা কমিশনের তরফে জানানো হয়, "আমরা নোটিশ দিয়েছি। কারও কোনও আপত্তি থাকলে জানাবেন। কমিশন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করবে"।

এরপরেই আইনজীবী সিব্বল আদালতে বলেন, “অনেক সময় কমিশন যে সব তথ্য চাইছে, আমাদের কাছে সেই সব তথ্য নেই। তখন কী ভাবে আবেদন গ্রহণ করা হবে?” বিচারপতি কান্ত বলেন, “কোনও নথি অবশ্যই রয়েছে। সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক দেওয়া কোনও না কোনও নথি কমিশন তো গ্রহণ করছে"। মামলাকারীদের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন, “আধার বা রেশন কার্ড ছাড়া বিহারের বেশির ভাগ মানুষের অন্য কোনও নথি নেই, কী ভাবে এই দাবি করছেন?”

এরপরেই এসআইআর করার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “নির্বাচন কমিশনের এই প্রক্রিয়া (এসআইআর) করার ক্ষমতা রয়েছে কি না তা দেখতে হবে। ২০০৩ সাল হোক অথবা ২০১৩ সাল, তাতে কিছু যায় আসে না"। আইনজীবী সিব্বল জানান, আবেদন পত্র যখন জমা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কমিশনের তরফে পাল্টা রশিদ দেওয়া হচ্ছে না।

এরপরেই বিচারপতি কান্ত বলেন, কারও নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, “এটি কি আশঙ্কা? না কি এর সত্যতা রয়েছে? তা আমরা বোঝার চেষ্টা করছি।” তিনি আরও বলেন, “৭ কোটি ২৪ লক্ষ ভোটার আবেদন জমা দিয়েছে। (বাদ পড়া) ৬৫ লক্ষের মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত, তা নিয়ে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। ৩৬ লক্ষ অন্যত্র চলে গিয়েছে। আপনাদের কাছে স্থানান্তরিত ভোটার নিয়ে একটা ধূসর এলাকা থাকতে পারে!”

বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “এই সমীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হতে পারে মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া। মৃত ব্যক্তিরা রয়েছেন কি না তা দেখার। এটা ড্রাফ্ট (খসড়া) তালিকা। এই তালিকা রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া হয়। সেখানে কোনও আপত্তি থাকলে তারা জানাক। কিন্তু ভুল তথ্য দিলে কমিশন তো যাচাই করবে।”

কমিশনের আইনজীবী বলেন, “২০০৩ সালের তালিকা যে কেউ দেখতে পাবেন। এর জন্য কোনও নথি লাগবে না। কারও কাছে যেতে হবে না।” তখন বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “হতে পারে বিশ্বাসের উপর ঘাটতি থেকে কমিশনকে বলা হচ্ছে।"

দিল্লিতে বসবাসকারী বিহারের ভোটারদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। আইনজীবীর বক্তব্য, “সংসদের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার নিয়ম সংসদ দ্বারা পাশ হয়নি। কেন এই ১১টি নথি বেছে নেওয়া হল? কমিশন কী ভাবে এটা ঠিক করল?”

আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মঙ্গলবার ফের আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ডের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর প্রশ্ন, “আধার এবং ভোটার কার্ড গ্রহণ করতে কমিশনের আপত্তি কোথায়? নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় বলেই কি আপত্তি কমিশনের?”

তিনি আরও বলেন, “এই পুরো প্রক্রিয়া এক্তিয়ার বহির্ভূত। নাগরিকত্ব নির্ধারণ কমিশনের কাজ নয়। নির্বাচনের দু’মাস আগে তারা এসআইআর শুরু করে ভোটারকে বাদ দিতে পারে না। নাগরিকত্বের কারণে কাউকে বাদ দিতে হলে, প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে হবে। যদি কমিশনের পরীক্ষায় আপনি নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারেন, তবে ধরে নেওয়া হচ্ছে ২০০৩ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আপনি ভোটার তালিকা থেকে বাদ।”

সুপ্রিম কোর্ট
গণহারে নাম বাদ যেতে দেখলে আদালত হস্তক্ষেপ করবে! SIR মামলায় কমিশনকে হুঁশিয়ারি সুপ্রিম কোর্টের
সুপ্রিম কোর্ট
Bihar: দুই কেন্দ্রে ভোটার তালিকায় নাম বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রীর, BJP নেতার বিরুদ্ধে সরব তেজস্বী যাদব

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in