
সাম্মানিক পারিশ্রমিক নয়, স্থায়ী সরকারি কর্মচারী হিসেবে পরিশ্রমের সঠিক মজুরি চাই। তেলেঙ্গানার অঙ্গনওয়াড়ির শিক্ষক থেকে শুরু করে সহকারীদের দীর্ঘদিনের এই দাবি পূরণ করা তো দূর অস্ত, রাজ্যের কেসিআর সরকার তা কানেই তুলছে না। আর তাই এবার আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষক ও হেল্পার ইউনিয়ন।
তেলেঙ্গানার জোগুলাম্বা গাড়ওয়াল জেলার পাচারলা বিসি কলোনির অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী মহম্মদ মেহবুবি প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। সেখানে সকাল থেকে বাচ্চাদের দেখাশোনা, তাঁদের জন্য খাবার বানানো, তাঁদের ঘুম পাড়ানোর কাজ করেন তিনি। কিন্তু এত কাজের পরেও মাসের শেষে হাতে সাম্মানিক হিসেবে পান মাত্র ৭,৮০০ টাকা। স্বামী মারা যাওয়ার পর ওইটুকু টাকাতেই তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়েকে মানুষ করছেন। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভয়, যদি অঙ্গনওয়াড়ির সহকারীর কাজ থেকে অবসর নেওয়ার সময় ‘গ্র্যাচুয়িটি’ না পান, তাহলে বাকি জীবন কাটাবেন কী করে?
মেহবুবা জানিয়েছেন, “আমার স্বামী মারা যাওয়ার ২ বছর পর ২০০৭ সালে আমি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হিসেবে যোগ দিই। কাজ শুরু করার পর প্রথম দুই বছর কোনওরকম পারিশ্রমিক পাইনি। তারপর ২০০৯ সালে মাসে ৪৫০০ টাকা করে সাম্মানিক পেতাম। এখন আমি মাসে ৭৮০০ টাকা করে হাতে পাই। কিন্তু আমার চিন্তা অন্য জায়গায়। অবসরের সময় যদি এককালীন কোনও টাকা না পাই, তাহলে ভবিষ্যতে আমার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাবো কী করে?” প্রায় প্রত্যেক অঙ্গনওয়াড়ি আন্দোলনেই শিক্ষক ও কর্মীরা গ্র্যাচুয়িটির দাবি জানান। স্থায়ী সরকারি কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি চেয়ে তারা কর্মচারীদের মজুরি আইন, ১৯৩৬-এর আওতায় ‘বেতন’ হিসেবে পাওয়ার দাবি জানান।
বর্তমানে একজন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক প্রতিমাসে পান ১২ হাজার টাকা, দিন প্রতি যা ৪৬০ টাকা। আবার সাধারণ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দৈনিক মজুরি মাত্র ৩০০ টাকা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ৬০:৪০ অনুপাতে এই টাকা দেয়। কিন্তু তেলেঙ্গানা সরকারের একজন স্থায়ী কর্মীর দৈনিক মজুরির (৮০০ টাকা) সঙ্গে অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষক বা কর্মীর মজুরির কোনও তুলনাই হয় না। তাই এবার অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষকদের জন্য মাসে ২৬ হাজার ও সাধারণ কর্মীদের জন্য মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনের দাবি জানিয়ে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে অনশনের ডাক দিয়েছে তেলেঙ্গানার অঙ্গনওয়াড়ি শিক্ষক ও কর্মীদের সংগঠন।