
ইনফোসিসের সহ প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করলেন কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরম। বেশ কিছুদিন থেকে সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের দাবিতে সরব হয়েছেন নারায়ণ মূর্তি। সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন, ভারতের উন্নতির জন্য সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার প্রয়োজন। এখন আত্মত্যাগের দরকার, কোনও ছাড়ের দরকার নেই।
নারায়ণ মূর্তির এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে কংগ্রেস সাংসদ বলেন, তাঁর এই মন্তব্য চরম হতাশাব্যঞ্জক। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কার্তি চিদাম্বরম বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব জরুরি। এক্ষেত্রে কাজের সময় বাড়ানো অর্থহীন। বরং, তার চেয়ে দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
ওই অনুষ্ঠানে চিদাম্বরম আরও বলেন, আমাদের সোমবার ১২ টা থেকে শুক্রবার ২ টো পর্যন্ত কাজ করা উচিত। আমাদের প্রকৃতপক্ষে সপ্তাহে ৪ দিন কাজের দিকে যাওয়া উচিত।
কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরমের আগে এই বিষয়ে সমালোচনা করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। চলতি মাসের ৪ তারিখ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আসলে জীবনের সঙ্গে পরিবার ও সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের শিক্ষা দেওয়া, বাড়িতে রান্না করা, বৃদ্ধ বাবা মায়ের জন্য সময় দেওয়া, বন্ধুদের জন্য সময় দেওয়া সবটাই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এই কাজ যেমনভাবে একজন পুরুষের তেমনভাবেই একজন মহিলার।
সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারায়ণ মূর্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সপ্তাহে ১০০ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যখন প্রধানমন্ত্রী এত কঠোর পরিশ্রম করেন তখন আমাদেরও চারপাশে যা ঘটছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার একমাত্র উপায় হল একইরকম কঠোর পরিশ্রম করা।
এর আগে নারায়ণ মূর্তি জানিয়েছিলেন, ভারতের যুব সমাজের উপলব্ধি করা উচিত যে ভারতকে এক নম্বর স্থানে নিয়ে যেতে গেলে আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি আরও জানিয়েছিলেন, তাঁর কর্মজীবনে তিনি প্রতিদিন গড়ে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতেন। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টায় অফিস যেতেন এবং রাত ৮.৪০ মিনিটে অফিস থেকে বেরোতেন। তিনি সপ্তাহে সাড়ে ৬ দিন কাজ করতেন। তিনি আরও জানান, এর জন্য তিনি গর্বিত।
যদিও এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে কার্তি চিদাম্বরম বলেন, সামাজিক শৃঙ্খলা এবং সম্প্রীতির জন্য কর্মজীবনে ভারসাম্য রাখা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যার মধ্যে রয়েছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। এর ফলে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো অসুখ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।
এর আগে নারায়ণ মূর্তির এই দাবির তীব্র বিরোধিতা করে প্রথিতযশা ব্যবসায়ী মুকেশ বনশল জানিয়েছিলেন, সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের দাবি করা সংস্থাগুলির অন্য ক্ষেত্রেও এগোনো উচিত। ৪০ ঘণ্টার বেতন দিয়ে ৭০ ঘণ্টা কাজ করানো ঠিক নয়। এটা অন্যায্য দাবি। তিনি আরও বলেন, “প্রথমত, এটি একটি ব্যক্তিগত পছন্দ। কর্মীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ, পরিবার গুরুত্বপূর্ণ, ক্যারিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এবং মানসিক শান্তি গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে জানতে হবে কোনটি কোন অগ্রাধিকারের ক্রমানুসারে গুরুত্বপূর্ণ এবং তারপরে সেই অনুযায়ী নির্বাচন করতে হবে।''
২০২৩ সালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে ভারতে কর্মীরা সপ্তাহে গড়ে ৪৭.৭ ঘণ্টা করে কাজ করেন। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন-এর (আইএলও) এক রিপোর্ট অনুসারে ভারতের চেয়ে কাতার, কঙ্গো, লিস্থো, ভুটান, জাম্বিয়া এবং ইউএই-র কর্মীরা বেশি সময় কাজ করেন।
ওই রিপোর্ট অনুসারে, ১০ টি শীর্ষ অর্থনীতির দেশের মধ্যে ভারতের সাপ্তাহিক কর্ম সবচেয়ে বেশি হলেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপির পরিমাণ ওইসব দেশগুলির মধ্যে সবথেকে কম।
এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরাও নারায়ণ মূর্তির মন্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন বেতনের কথা উল্লেখ করে তাঁদের প্রশ্ন, কম বেতনপ্রাপ্ত ব্যক্তি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করবে কেন? অনেকে আবার দাবি করেছেন, ইনফোসিসের 'সঠিক' বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব ভাল রেকর্ড নেই।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন