
নিউ দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর পর নিশানা করা হয়েছিল রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে। পাশাপাশি, প্রশ্ন উঠেছিল রেলের নিরাপত্তা নিয়ে। যদিও তার দায় এড়াতে চেয়েছিল রেল। কিন্তু সেটা সফল হয়নি। কারণ একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে। শনিবার সন্ধ্যায় দু’ঘন্টার মধ্যে ২৬০০ টি বাড়তি জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল নয়াদিল্লি স্টেশনে। এরপরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই ঘটনা কি চাইলে ঠেকানো যেত না?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে নিউ দিল্লি স্টেশনে গড়ে সাত হাজার জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়। রেলের অসংরিক্ষত টিকিট সিস্টেম (ইউটিএস) থেকেই মিলেছে এই তথ্য। তবে শনিবার বিক্রি হয়েছে ৯৬০০ টি জেনারেল টিকিট। এদিকে ৮ ফেব্রুয়ারি এবং ২৯ জানুয়ারি এর থেকে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছিল। সেই দু’দিনও স্টেশনে কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। কিন্তু সেই দু’দিন কোনও পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে নি। তা হলে শনিবার কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল? এনিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
রেলের এক আধিকারিক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, “১৫ ফেব্রুয়ারি প্ল্যাটফর্মে বিপুল সংখ্যক মানুষ ছিলেন। এতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার আগে ৮ তারিখ মোট ৫৪,৬৬০টি এবং গত মাসের ২৯ তারিখ ৫৮,০০০টি জেনারেল টিকিট বিক্রি হয়েছিল ওই স্টেশনেই। এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করাই যেত”।
আর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মহাকুম্ভের জন্য এখন মোট টিকিট বিক্রির সংখ্যা দিয়ে ভিড়ের আন্দাজ পাওয়া যাবে না। মানুষ ট্রেনে দাঁড়ানোর জন্যেও মারপিট করছেন। এই পরিস্থিতিতে জেনারেল বগিতে কেউ টিকিট কেটেছেন কি না, তা যাচাই করা সম্ভব নয়। ফলে ইউটিএসে যা দেখা যাচ্ছে, আসলে তার চেয়েও অনেক বেশি ভিড় ছিল”। ওই আধিকারিকের আরও জানিয়েছেন, টিকিট বিক্রির পরিমাণ দেখে আগেই ভিড় আন্দাজ করা গিয়েছিল। আগে থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে, হয়তো পদপিষ্টের পরিস্থিতি ঠেকানো যেত।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১১ টা নাগাদ নিউ দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুসারে, শনিবার রাতে নয়াদিল্লী রেল স্টেশনের ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমিয়েছিলেন কুম্ভ যাত্রীরা। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না আসা এবং সেইসময় ওই দুই ট্রেন বাতিল হয়ে গেছে বলে কেউ কেউ বলতে শুরু করায় যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যাত্রীদের ভিড়, ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় ১৮ জনের। যার মধ্যে ৩ জন শিশু এবং ১৪ জন মহিলা ছিলেন।
রেল পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস দাঁড়িয়েছিল। সেই সময় ওই প্ল্যাটফর্মে প্রচুর ভিড় ছিল। অন্যদিকে স্বতন্ত্রতা সেনানী এক্সপ্রেস এবং ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস দেরিতে চলছিল। ফলে প্ল্যাটফর্ম নাম্বার ১২, ১৩ এবং ১৪তেও প্রচুর মানুষ ভিড় করেছিলেন। যদিও রবিবার রেল দাবি করে, স্টেশনে প্লাটফর্ম বদল সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা হয়নি। সব ট্রেন সময়েই চলছিল।
এই ঘটনায় রেলের তরফ থেকে মৃতদের পরিবারের জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন