
ছত্তিশগড়ে এক্সটেনশন কয়লা প্রকল্প (Operationalization of the Kente Extension Coal Project) চালুর নামে ১,৭৪২ হেক্টর ঘন জঙ্গল ধ্বংসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা বাঁচাতে এবার কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদবকে চিঠি দিলেন বাম নেত্রী বৃন্দা কারাত। চিঠিতে তিনি এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, এই প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে কমপক্ষে ৪.৫ লক্ষ গাছ কেটে ফেলা হবে।
গত ২৬ জুন সুরগুজা জেলার বন আধিকারিকরা তথাকথিত অঞ্চল পরিদর্শন করেন। এরপরেই হাসদেও আরন্দ অঞ্চলে (Hasdeo-Arand region coal project) খনির প্রকল্পের জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১৭৪২.৫০ হেক্টর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৪.৫০ লক্ষ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই ঘটনার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য তথা রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ বৃন্দা কারাট।
চিঠিতে বৃন্দা কারাট লিখেছেন, "আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, ছত্তিশগড় বন দপ্তরের এই বিধ্বংসী সিদ্ধান্ত - কেঁটে এক্সটেনশন কয়লা প্রকল্পে অনুমোদন, আপনি অবিলম্বে বাতিল করুন। এই বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছি"।
চিঠিতে তিনি আরও জানান, এই প্রকল্প বৃহত্তর হাসদেও অরণ্য এলাকার অন্তর্গত এবং যা সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে রূপায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্প রূপায়ণের জন্য রাজস্থান সরকারের বিদ্যুৎ সংস্থা আদানি এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যৌথভাবে 'পারসা কেঁটে কোলিয়ারিজ লিমিটেড' নামে এক সংস্থা তৈরি করেছে। যে সংস্থায় আদানিদের মালিকানা ৭৪ শতাংশ।
চিঠিতে বৃন্দা কারাত জানিয়েছেন, "এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে আরও বিপর্যয় ঘটবে যেখানে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারি পরিদর্শনের প্রতিবেদন অনুসারে, কমপক্ষে ৪.৫ লক্ষ গাছ কাটতে হবে। যা ঘন জঙ্গলে অবস্থিত এবং কার্বন সংগ্রহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশীয় গাছে পরিপূর্ণ। এই অঞ্চলে খোলা মুখ খনির ফলে ইতিমধ্যেই হাজার হাজার গাছ ধ্বংস হয়ে গেছে, জল এবং মাটি দূষিত হয়েছে।"
বাম নেত্রীর অভিযোগ, "এই সংস্থাটিকে হাসদেও-পারসা কয়লা প্রকল্পের খনি বিকাশের জন্য এবং পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রেকর্ড থেকে দেখা গেছে যে এই উদ্যোগের অধীনে খনন করা কয়লার অধিকাংশ পরিমাণকে 'প্রত্যাখ্যাত কয়লা' হিসেবে দেখিয়ে বেসরকারি কোম্পানির বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। যা প্রকল্প অনুমোদনের সময় 'জনস্বার্থ' হিসাবে দেখানো হয়েছিল তা প্রমাণ করে না। এতে কোনও জনস্বার্থ জড়িত নেই, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত লাভের জন্য খনিজ সম্পদের শোষণ করা হচ্ছে"।
তিনি সতর্ক করেছেন, "এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ইতিমধ্যেই প্রাকৃতিক সম্পদে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আরও বিপর্যয় নেমে আসবে"। বৃন্দা কারাট চিঠিতে আরও লিখেছেন, "সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে প্রায় ৪.৫ লক্ষ গাছ কাটা পড়বে। এই গাছগুলি মূলত আদিবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলের ঘন জঙ্গলের, যা কার্বণ শোষণে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা নেয়"।
তিনি উল্লেখ করেন, এই প্রকল্প গ্রহণের আগে স্থানীয় গ্রামসভাগুলির অনুমতি না নেওয়ায় সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে ১৫০০ টির-ও বেশি লিখিত আপত্তি সরকারকে জানানো হলেও সেগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
এরপরেই বৃন্দা কারাট চিঠিতে তাঁর অতীতের একটি মন্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন, "এফআরএ-২০০৬ অনুযায়ী শংসাপত্র দেওয়ার ফলে বনভূমির ক্ষতি হচ্ছে। যা রুখতে কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন"। বাম নেত্রী বলেন, মূলত বেসরকারি খনন প্রকল্পের মাধ্যমে তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে প্রকৃতপক্ষে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, "এই অঞ্চলের আদিবাসীরা যেভাবে প্রকল্পের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে গাছ ও প্রকৃতি রক্ষার জন্য লড়ছেন, তাতে এটা প্রমাণিত, ভারতে আদিবাসীরাই প্রকৃত বনরক্ষক"।
বাম নেত্রী জানিয়েছেন, "একটি বেসরকারি সংস্থার স্বার্থের চেয়ে বনভূমি, গাছপালা নির্বিচারে কাটা এবং সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল ধ্বংস করা আটকানো কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী হিসেবে অবশ্যই আপনার দায়িত্ব"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন