
রুশ ভূখন্ডের হাজার হাজার কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে ভয়ঙ্কর ড্রোন হামলা চালালো ইউক্রেন। ১১৭টি ড্রোন হামলায় ৪১টি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইউক্রেনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে 'স্পাইডার ওয়েব' অর্থাৎ 'মাকড়সার জাল'। গত দেড় বছর ধরে এর প্রস্তুতি চলছিল বলে জানা গেছে।
এখনও থামেনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। গত মাসে তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলে বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া এবং ইউক্রেন। সেই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে একমত হয়নি দুই দেশ। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দু’পক্ষই ১০০০ জন করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। আজ ফের ইস্তানবুলেই শান্তি বৈঠকে বসেছে দুই দেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তার আগেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালালো ইউক্রেন।
রবিবার রাশিয়ার ওলেনিয়া বিমানঘাঁটি, মস্কোর পূর্বদিকে অবস্থিত ইভানোভো ও দিয়াগিলেভো বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। বেছে বেছে সামরিক ঘাঁটিগুলিতেই আক্রমণ করা হয়। ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা এসবিইউ-এর প্রধান ভ্যাসিল মালিউকের তত্ত্বাবধানে পুরো অভিযানটি চলে বলে জানা গেছে।
জানা যায় ইউক্রেন থেকে রাশিয়া ভূখণ্ডের ৫০০-৪০০০ কিমির বেশি দূরত্বে থাকা স্থানে ড্রোন হামলা চলে। আর এই ড্রোনগুলি নাকি আগেই ট্রাকে করে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয় বিষয়টি। এসবিইউ জানিয়েছে, এই অভিযানে ৪১টি সামরিক বিমান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে Tu-95 এবং Tu-22-র মতো বোমারু বিমান। যেগুলি ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে হামলা চালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘তাস’ সূত্রে খবর, ড্রোন হামলায় জড়িত সন্দেহে এক ট্রাকচালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স মাধ্যমে জানান, "এই অভিযানে মোট ১১৭টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল এবং একই সংখ্যক ড্রোন অপারেটর যুক্ত ছিলেন। বিমান ঘাঁটিতে থাকা কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রবাহী জাহাজের ৩৪% আঘাত হেনেছিল। আমাদের সেনা রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে তিনটি ভিন্ন 'টাইম জোনে' হামলা চালায়।"
জেলেনস্কির মতে এই পরিকল্পনা একদিনের নয়। দেড় বছর ধরে প্রস্তুতি নেওয়ার পরই হামলা চালানো হয়। তিনি লেখেন, "এক বছর ছয় মাস আগে আমার অনুমোদিত কিছু পরিকল্পনা যখন বাস্তবায়িত হয়েছে, রাশিয়ানদের চল্লিশটিরও বেশি বিমান ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি সত্যিই সন্তোষজনক। আমরা এই কাজ চালিয়ে যাব।"
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, "এই হামলার আগের দিন রাতে প্রায় ৫০০টি রাশিয়ান ড্রোন উড়েছিল। দিন দিন রাশিয়ার ড্রোনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা লাগাতার আক্রমণের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। কিন্তু আমাদের দেশ ও নাগরিকদের রক্ষা করতে হবে।"
প্রসঙ্গত, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দুই দেশ লাগাতার একে অন্যকে আক্রমণ করেছে। তবে এই ড্রোন হামলা ইউক্রেনের সবথেকে সফল ও বড় আক্রমণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন