• গত বছরের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালানোর পরে ফের উত্তপ্ত সিরিয়া।
• মূলত সুন্নি গোষ্ঠীর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংখ্যালঘু শিয়াপন্থী আলাউইট গোষ্ঠীর সংঘর্ষ।
• আলাউইট গোষ্ঠীর অধিকাংশই দেশত্যাগী আসাদের সমর্থক।
• চারদিনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১ হাজার মানুষের মৃত্যু। দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন আলাউইট গোষ্ঠীর মানুষজন।
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানে বাশার আল-আসাদ-এর দেশ ছাড়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ফের উত্তপ্ত সিরিয়া। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার জন নিহত হয়েছেন। গত চারদিন ধরে সিরিয়া জুড়ে এই সংঘর্ষ চলছে। অসমর্থিত সূত্রে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
সিরিয়ার জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভাষণে, অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ সারা জানিয়েছেন, আসাদের অনুগত এবং বিদেশী কিছু শক্তি অস্থিরতা উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য, এই আহমেদ সারার বিদ্রোহী আন্দোলনেই ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হন আসাদ এবং দেশ ছেড়ে পালান।
ওই বিবৃতিতে আহমেদ সারা জানিয়েছেন, “আজ, এই সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে, আমরা নিজেদেরকে একটি নতুন বিপদের মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছি - প্রাক্তন শাসনের অবশিষ্টাংশ এবং তাদের বিদেশী সমর্থকদের দ্বারা নতুন সংঘাত উস্কে দেওয়ার এবং আমাদের দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। যার লক্ষ্য দেশকে বিভক্ত করা এবং এর ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করা।”
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার বন্দর শহর লাটাকিয়াতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আসাদ অনুগত আলাউইট গোষ্ঠীর মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। সূত্র অনুসারে, ওইদিনের সংঘর্ষ সিরিয়ায় গত ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কথা আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। ইসলামিক গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের অভ্যুত্থানে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশ ছেড়ে পালান প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদ।
আলাউইট উপজাতি অধ্যুষিত উপকূলীয় অঞ্চলে আসাদের অনুগতদের এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণের ঘটনায় বেশ কয়েকটি শহরে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী জানিয়েছে, সুন্নি জঙ্গিরা নিতান্তই সন্দেহবশে সংখ্যালঘু ইসলামী সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে কয়েক ডজন প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। জঙ্গী গোষ্ঠীর সন্দেহ, আসাদ অনুগত এই সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বিদ্রোহে মদত দিচ্ছে।
জানা গেছে, নিহতদের অধিকাংশই আলাউইট গোষ্ঠীর মানুষ। যারা বেশিরভাগই উপকূলীয় অঞ্চল লাটাকিয়া এবং টারটুস-এ বসবাস করেন। এঁরা সকলেই শিয়া গোষ্ঠীর। সিরিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুন্নি ইসলামিক গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-সারা জানিয়েছেন নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে শান্তি ফিরে আসবে। যদিও নির্বাচন কবে হবে তা এখনও জানা যায়নি।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-কে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এপি জানিয়েছে, ৭৪৫ জন অসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগকেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ১২৫ জন সদস্য এবং আসাদের অনুগত সশস্ত্র গোষ্ঠীর ১৪৮ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। লাটাকিয়ার আশেপাশের বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ ও পানীয় জল বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আসাদের বিরুদ্ধে সমর্থনকারী সিরিয়ান ক্যাম্পেইন এবং সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস, শনিবার জানিয়েছে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং আসাদের সমর্থক বন্দুকধারীরা দুই পক্ষই গণহত্যা এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে।
SNHR-এর অনুমান, বৃহস্পতিবার সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর ১০০ জন সদস্য নিহত হয়েছে, যেখানে সপ্তাহান্তে সন্দেহভাজন প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করে আনুমানিক ১৪০ জন অসামরিক লোকের মধ্যে ১২৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে।
স্থানীয় কিছু মানুষ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে বহু আলাউইট পরিবারের বাড়ি লুট করা হয়েছে এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সিরিয়ার এক নিরাপত্তা সূত্র এর আগে জানিয়েছিল, লাটাকিয়া, জাবলাহ এবং বানিয়াস শহরের চারপাশে লড়াইয়ের গতি কমে এসেছে। বর্তমানে নিরাপত্তা বাহিনী আশেপাশের পাহাড়ি এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে যেখানে আনুমানিক ৫,০০০ আসাদপন্থী বিদ্রোহী লুকিয়ে আছেন।
গত বছর সারা'র সুন্নি ইসলামপন্থী হায়াত তাহরির আল-শাম গোষ্ঠীর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা তার সরকারকে উৎখাত করার পর, কয়েক দশক ধরে চলা তীব্র দমন-পীড়ন এবং এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। যদিও দেশেই থেকে যান তার কিছু ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং সমর্থক।
সূত্র অনুসারে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অনুগত সুন্নি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির দ্বারা গত কয়েকদিনে সংঘটিত গণহত্যা থেকে পালিয়ে বাঁচতে সিরিয়ার আলাউইট গোষ্ঠীর মানুষের আল কবির নদী পার হয়ে লেবাননে পালাচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন