
বালুচিস্তানের বোলানে হাইজ্যাক হওয়া জাফর এক্সপ্রেস থেকে ১৫০ জনেরও বেশী যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। পাক সেনার সাথে গুলির লড়াইয়ে অন্তত ২৭ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে।
পাক রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)-র সাথে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর রাতভর লড়াইয়ের পর ১৫৫ জন বন্দী যাত্রীকে ট্রেন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত যাত্রীদের মধ্যে বহু মহিলা ও শিশু রয়েছে, তাঁদের কাছের শহর মাচেতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে একটি অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত যাত্রীদের মধ্যে ১৭ জন আহত।
জাফর এক্সপ্রেসে মোট কতজন যাত্রী ছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনুমান করা হচ্ছে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন। বিএলএ কোনও যাত্রীর হতাহতের খবর অস্বীকার করেছে। তবে ৩০ জন সৈন্যকে হত্যা এবং ২১৪ জন যাত্রীকে বন্দী করে রাখার দাবি করেছে। যদিও সরকারের তরফ থেকে এই নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি।
একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, রাতের অন্ধকারেই বন্দী যাত্রীদের কয়েকজনকে নিয়ে পাহাড়ে চলে গিয়েছে বিএলএ-র একটি দল। বাকি যাত্রীদের নিয়ে এখনও ট্রেনের মধ্যে রয়েছে বিএলএ-এর বাকি সদস্যরা। পাক সেনাও পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।
এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা রানা দিলওয়ার সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বুধবার সকাল পর্যন্ত ট্রেনটি ঘটনাস্থলেই রয়েছে এবং সশস্ত্র বিদ্রোহীরা যাত্রীদের ঘিরে রেখেছে। তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা অভিযানে হেলিকপ্টার এবং অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
৪৮ ঘন্টার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দী, সমাজকর্মী এবং সামরিক বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে বিএলএ। রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বন্দীদের মৃত্যুদণ্ড এবং ট্রেনটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করার হুমকি দিয়েছে তারা।
রয়টার্স আরও জানিয়েছে, জাফর এক্সপ্রেসে ৪২৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৮০ জন সামরিক কর্মী ছিলেন।
পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। যাত্রীদের উদ্ধারে সেনা বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বন্দী যাত্রীদের আত্মীয়স্বজনদের সাহায্যার্থে পেশোয়ার এবং কোয়েটা রেলওয়ে স্টেশনে জরুরি ডেস্ক তৈরি করেছে পাকিস্তান রেলওয়ে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বালুচিস্তানের বোলান জেলার মুশকাফ এলাকা থেকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। ট্রেনটি থামানোর জন্য আগেই বিস্ফোরণের মাধ্যমে রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ট্রেন থামলে বিএলএ সদস্যরা ট্রেনে উঠে পড়ে।
বালুচিস্তানে কয়েক দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে। বিদ্রোহীদের অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার বালুচিস্তানের খনিজ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ শোষণ করছে কিন্তু এতে স্থানীয় জনগণের কোনও উন্নতি হচ্ছে না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন