
ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মার্কিন সফর করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুই রাষ্ট্রনায়কের হেভিওয়েট বৈঠকের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা বিশ্ব। প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে প্রযুক্তি একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। যা পারস্পরিক সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও দুই নেতার বৈঠকের বিভিন্ন দিককে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদী এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বৈঠক বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিতে। কোথাও ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়েছে আবার কোথাও বাণিজ্য নীতি সমালোচনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস "হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং মোদির আলোচনায় বিতর্কের দিক তুলে ধরেছে। সংবাদপত্রটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী ট্রাম্পের দাবি মেনে নেওয়ার কৌশলগত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
রয়টার্সে বলা হয়েছে, "ভারতের শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে"।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, "ট্রাম্প মোদীকে ‘মহান বন্ধু’ বললেও ভারতীয় পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।"
ফক্স নিউজের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ট্রাম্পের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলেছেন ‘মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন।
আল জাজিরা আবার সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তুলে ধরেছে। এই সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত তাহাব্বুর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণের ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকের শুরুতেই ভারতের শুল্ক নীতির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, "আমরা ভারতের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে চাই। ভারতীয় পণ্যের ওপর আমরা একই হারে শুল্ক বসাবো, যেমনটা তারা আমাদের পণ্যের ওপর আরোপ করে।" ট্রাম্পের এই বক্তব্যে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী মোদি বাণিজ্য ইস্যুতে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখালেও ভারতের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, "ভারত তার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।" তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ভারত মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।
দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো শুল্ক ব্যবস্থা। ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে যে ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর "অত্যন্ত উচ্চ" শুল্ক আরোপ করে, যা দুই দেশের বাণিজ্য ভারসাম্য নষ্ট করছে। বৈঠকের ঠিক আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নতুন পারস্পরিক শুল্ক নীতির ঘোষণা করেন। যেখানে বলা হয়, "যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করবে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের পণ্যের ওপর একই পরিমাণ শুল্ক বসাবে।"
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রশাসন ইতোমধ্যেই ভারতের ‘জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স’ (GSP) সুবিধা বাতিল করেছে, যার ফলে ভারতীয় রফতানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি এই প্রসঙ্গে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে মার্কিন বিনিয়োগ এবং ভারতের ক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছেন।
বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়েও আলোচনা করা হয়। যদিও দুই নেতা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে সূত্রের খবর, ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায়।
এক সাংবাদিক ভারতীয় অভিবাসীদের বিষয়ে মোদির প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, "যে কেউ অবৈধভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করে, তাদের সেই দেশে থাকার অধিকার নেই। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই আইনের শাসনকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে।"
দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ ও নিরাপত্তা ইস্যুটিও বেশ গুরুত্ব পায়। মোদি এবং ট্রাম্প উভয়েই সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাব্বুর রানাকে ভারতে প্রত্যর্পণেরও আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, "আমরা একমত যে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমি রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞ যে, তিনি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার অন্যতম অভিযুক্তকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।"
দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করতে বড় আকারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান 'F-35' ভারতকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন