পেরুতেও আছড়ে পড়লো জেন জি (Gen-G) বিক্ষোভের ঢেউ। পেরুর অন্তর্বর্তী সরকারের বিরোধিতায় শুরু হওয়া জেন-জি বিক্ষোভে মৃত্যু হল একজনের। গতকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখনও পর্যন্ত আহত হয়েছেন ১১৩ জন নাগরিক। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৮৪ পুলিশ কর্মী ও ১০ জন সাংবাদিক। জানা গেছে, বিক্ষোভ চলাকালীন নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে ৩২ বছর বয়সী জনপ্রিয় র্যাপার এডুয়ারডো রুইজ-এর (Eduardo Ruz) মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার পেরুর অন্তর্বর্তী সরকার রাজধানী লিমায় জরুরি অবস্থা জারি করে। মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেন জি বিক্ষোভে একজনের মৃত্যু হবার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পেরুর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট জোস জেরি (Jose Jeri) ইস্তফা দেবেন না বলে জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে পেরুর আইনসভা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডিনা বলুয়ারতে-কে (Dina Boluarte) ইমপিচ করার পর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এরপরেই শুরু হয় নতুন করে বিক্ষোভ। নতুন প্রধানমন্ত্রী এরনেস্টো আলভারেজ জানিয়েছেন, সংসদের বাইরে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হবার পর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গতকাল পেরুর রাজধানী লিমায় কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। নিজেদের জেন জি প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করা বিক্ষোভকারীরা রাস্তার দখল নিয়ে নেয় এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার আহ্বান জানায়।
পেরুতে বেশ কিছু সময় ধরেই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ চলছে। প্রেসিডেন্ট বলুয়ারতের অপসারণের পরেও তা থামানি। এমনকি জোসে জেরিকে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি করার পরেও বিক্ষোভ থামেনি। পেরুর অন্তর্বর্তী মন্ত্রীসভার প্রধানমন্ত্রী আলভারেজ এর আগে জেন জি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের যোগ আছে বলে জানিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভের তেজ আরও বাড়ে।
এক মাস আগে যুবকদের জন্য উন্নত পেনশন এবং মজুরির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তীতে দেশে বেড়ে চলা অপরাধ ও দুর্নীতির প্রতিবাদে বিক্ষোভের ঝড় ওঠে। এর পরেই গত সপ্তাহে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি দিনা বলুয়ার্তেকে ক্ষমতাচ্যুত করা হন।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে অপসারণ করা হয়েছিল পেরুর সদ্য নির্বাচিত বামপন্থী রাষ্ট্রপতি পেড্রো ক্যাসিলোকে। কংগ্রেসে বিরোধীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় পদচ্যুত হন তিনি। পেরুর নতুন রাষ্ট্রপতি হন উপরাষ্ট্রপতি ডিনা বলুয়ার্তে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরই মেক্সিকান এমব্যাসি যাওয়ার পথে পেড্রো ক্যাসিলোকে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।
ক্ষমতা হারানো রাষ্ট্রপতির এক সময়ের সতীর্থ ৬০ বছর বয়সী ডিনা বলুয়ার্তো জানিয়েছিলেন, তিনি ২০২৬ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, বামপন্থী 'ফ্রি পেরু' দলের নেতা পেড্রো ক্যাসিলো 'বিরোধী নিয়ন্ত্রিত' কংগ্রেস ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন। কারণ সংসদে সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকার চালাতে পদে পদে বাধা পাচ্ছিলেন তিনি। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগও করেন।
২০২১ সালে পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্যাসিলো পেয়েছিলেন ৮৮,৩৬,৩৮০ ভোট (৫০.১২ শতাংশ)। তাঁর বিপক্ষের প্রার্থী দক্ষিণপন্থী দলের কেইকো ফুজিমোরি পেয়েছিলেন ৮৭,৯২,১১৭ ভোট (৪৯.৮৭ শতাংশ)।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন