Bangladesh: দুর্নীতি মামলায় প্রধান বিরোধী দলের চেয়ারম্যানের ৯ বছরের সাজা - প্রতিবাদে বিক্ষোভের ডাক

একই সঙ্গে আদালত তারেকের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারেককে তিন কোটি টাকা ও জুবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
জুবেইদা রহমান
জুবেইদা রহমান ফাইল ছবি সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুর্নীতি মামলায় ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আদালত এই রায় দেয়।

একই মামলায় তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানেরও ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত তারেকের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকার সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তারেককে তিন কোটি টাকা ও জুবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।

০২ আগস্ট ঢাকার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালত ও মহানগর দায়রা জজ আদালত তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীকে এই সাজা দেয়। এ মামলায় গত ২৭ জুলাই দুদকের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর বুধবার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত উৎস থেকে অর্জিত ৩৫ লাখ টাকার সম্পদ তাঁদের বৈধ উৎস থেকে অর্জন প্রমাণে ভিত্তিহীন রেকর্ড ও বক্তব্য উপস্থাপনে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই নিয়ে তারেক রহমানকে মোট ছয়টি মামলায় সাজা দেওয়া হলো। কোনো মামলাতেই তারেক রহমান বিচারের মুখোমুখি হননি। পলাতক ঘোষণা করে মামলার বিচার কাজ শেষ করা হয়েছে।

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরে সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার এক থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। যা ১/১১ (এক এগারো) এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে পরিচিতি। সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও ব্যবসায়ীদের আটক অভিযান চালানো হয়।

এই অভিযানের অংশ হিসেবে তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডেও নেওয়া হয়। ১৮ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তিনি। ওই ১৮ মাসে ১৩ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তারেককে। ১৩ মামলায় ধাপে ধাপে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় তারেক রহমান লন্ডন চলে যান। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার আট দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। সেই থেকে তিনি লন্ডনেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন।

রায়ের পর বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। এখন সেই মামলায় দণ্ডাদেশ দেওয়া হলো। মাত্র ১৬ কার্যদিবসে ৪২ জনের সাক্ষ্য নিয়ে রায় ঘোষণার বিষয়টি প্রমাণ করে এই মামলা কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতে সমাবেশ করেছেন। মামলার বিচার শুরুর আদেশের পর মামলার শুনানিকালে আদালত চত্বরে কয়েক দফা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেখা যায়।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া:

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে দণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামী ০৪ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি।

নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে, এটি ফরমায়েশি রায়। এই রায় সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না। আপনাকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমতা থেকে হটিয়ে বাংলার মাটিতে আপনার বিচার করা হবে। আপনি (শেখ হাসিনা) প্রস্তুত থাকুন।’

বিএনপির যুগ্ম সচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে প্রহসনের রায় দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী দল হিসেবে পরিচিত। তারা (আওয়ামী লীগ) তারেক রহমানকে এতটাই ভয় পায়, তিনি (তারেক রহমান) কখন এ দেশে ছুটে আসেন, এমন অজানা আতঙ্ক ও ভয়ে থাকে।

এর আগে যেসব মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তারেক রহমান:

এক. ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারেক রহমানকে খালাস দেওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হাইকোর্টে আপিল করেন। ওই আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।

দুই. ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তারেকের দণ্ড হয় ১০ বছর। এই মামলায় সাজা হয় তাঁর মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও। বিচারিক আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলেও রাষ্ট্রের আপিলে উচ্চ আদালত সাজা দ্বিগুণ করেছেন।

তিন. ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়। গ্রেনেড হামলার ঘটনা থেকে উদ্ভূত হত্যা মামলায় তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই দিনে ওই ঘটনা থেকে উদ্ভূত বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায়ও রায় দেওয়া হয়। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তারেক রহমানকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

চার. ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে নড়াইল জেলার একটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় নড়াইলে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির এই মামলা করেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার ও পাকবন্ধু (পাকিস্তানের বন্ধু) আখ্যা দিয়ে বেশ কিছু বক্তব্য দেন তারেক। সেই খবর প্রকাশিত হয় দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে। এতে বঙ্গবন্ধুর সম্মানহানি হয়েছে জানিয়ে সে সময় নড়াইলের এক মুক্তিযোদ্ধা জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন।

জুবেইদা রহমান
Climate Change: জাপান জুড়ে তাপপ্রবাহ, একমাসে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ৭ হাজারেও বেশি
জুবেইদা রহমান
Bangladesh: বাংলাদেশে সরকারের ইস্তফার দাবিতে এবার কি ঢাকা অবরোধে যাবে বিরোধীরা?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in