ভারতের নতুন সংসদ ভবনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে নিয়ে ম্যুরালের মাধ্যমে অখণ্ড ভারতের যে মানচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ধরনের মানচিত্রে বাংলাদেশকে অংশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এসব দল এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মানচিত্রটি অপসারণেরও দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে দিল্লির কাছে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকেও। দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে জানান, এটি নিয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে দিল্লির কাছে ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি।
সোমবার (৫ জুন) সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, 'এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অখণ্ড ভারত’-এর ব্যাখ্যা জানতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। তারপরও বাড়তি ব্যাখ্যার জন্য আমরা দিল্লির মিশনকে বলেছি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে। তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কী তা জানার জন্য।'
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া:
ভারতের নতুন সংসদ ভবনে 'অখণ্ড ভারত'র মানচিত্রের বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভারতে এমন মানচিত্র তৈরির ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। দলটি বলেছে, এটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য অপমানজনক।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘অন্য কোনো দেশের অখণ্ড মানচিত্রে বাংলাদেশকে দেখানোটা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।’
'অখণ্ড ভারত'র মানচিত্র নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশে বামপন্থী কয়েকটি দল। গত ৩ মে এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংবাদ বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি)।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বিবৃতিতে বলেছেন, 'ভারত সরকার হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আপত্তিকর এবং বিভ্রান্তিমূলক মানচিত্রের এই ম্যুরাল স্থাপন করেছে।'
অবিলম্বে এই মানচিত্র অপসারণের দাবিও জানিয়ে সিপিবি নেতৃবৃন্ধ বলেন, 'অখণ্ড ভারতের এই ম্যুরাল প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।'
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছেন, 'অখণ্ড ভারত মানচিত্রে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, এটি এসব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।'
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নামে অন্য আরেকটি দল এক বিবৃতিতে ভারতের এ ধরনের মানচিত্র তৈরির ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, ‘ভারতের শাসকদের কল্পিত মানচিত্রে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ দেখানো আপত্তিকর।’
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে বলেন, '১৯৪৭ উত্তর আধুনিক রাজনৈতিক মানচিত্রে অখণ্ড ভারত বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু অখণ্ড ভারতের মানচিত্র ভারতের সংসদে প্রদর্শন এটা অনভিপ্রেত।
তিনি আশা করেন, 'ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এটি সংশোধন করে সঠিক মানচিত্র প্রদর্শন করবে।'
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।