

মঙ্গলবার সকালে ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলাদেশ জুড়ে। এই আবহে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তির্যক প্রতিক্রিয়া দিলেন নির্বাসিত বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিন, যাঁর একাধিক বই খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার নিষিদ্ধ করেছিল।
মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর চাপ এবং লাগাতার প্রাণনাশের হুমকির মুখে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়ে ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করা তসলিমা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে খালেদা জিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ভাষায় লিখেছেন, “১৯৯৪ সালে তিনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, নারীবাদী, মুক্তচিন্তক লেখকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলা করে জিহাদিদের পক্ষ নিয়েছিলেন। লেখকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এবং অতঃপর দেশ থেকে তাঁকে, মানে আমাকে, আমার স্বদেশ থেকে অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করেছিলেন। এবং তাঁর শাসনামলে তিনি আমাকে আর দেশে ফিরতে দেননি।“
তিনি লেখেন, “তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কি যে বইগুলো তিনি ব্যান করেছিলেন, সেগুলো থেকে ব্যান উঠে যাবে না? উঠে যাওয়াই তো উচিত। তিনি আমার ‘লজ্জা’ নিষিদ্ধ করেছিলেন ১৯৯৩ সালে। ‘উতল হাওয়া’ নিষিদ্ধ করেছিলেন ২০০২ সালে। ‘ক’ নিষিদ্ধ করেছিলেন ২০০৩ সালে। ‘সেই সব অন্ধকার’ নিষিদ্ধ করেছিলেন ২০০৪ সালে। বেঁচে থাকাকালীন তিনি বাকস্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়িয়ে বইগুলোর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেননি। তাঁর মৃত্যুই যদি বাকস্বাধীনতাকে এখন রক্ষা করে।“
লেখিকার প্রশ্ন, "তাঁর মৃত্যু কি আমার ৩১ বছরের নির্বাসনদণ্ডের সমাপ্তি ঘটাবে? নাকি এক শাসকের অন্যায় আরেক শাসক যুগের পর যুগ বহন করে চলবেন?"
তসলিমা তাঁর 'লজ্জা' উপন্যাসে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর হিন্দুদের ওপর হওয়া হিংসার কথা উল্লেখ করেছেন। বইটি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়। তবে, বর্তমান প্রতিবাদের মুখে বইটি দ্বিতীয়বারের মতো নিষিদ্ধ করা হয়।
১৯৯৪ সালের মে মাসে ‘ফেরা’, 'নির্বাসন' সহ লেখিকার আরও চারটি বই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং জনশৃঙ্খলার প্রতি হুমকির কারণ দেখিয়ে। বিএনপি-র জোটসঙ্গী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিক্ষোভের জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশে চলা লাগাতার হিংসা এবং মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর দেওয়া প্রাণনাশের হুমকির জেরে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হন তসলিমা। প্রথমে সুইডেনে যান তিনি। এর এক দশক পর ভারতে চলে আসেন তিনি।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন