
দীর্ঘ দেড় যুগ লেগে গেল বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে। ২০০৪ সালের পর ২০২২। ১৮ বছর পর বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রথাবিরোধী চিন্তক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের হত্যায় মূল চার অপরাধীর সাজা ঘোষণা হল। বুধবার তাদের মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে হামলা চালানো হয়়় হুমায়ুনের ওপর। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় কবিকে। গুরুতর জখম হন তিনি। তার পর বাংলাদেশে, ব্যাংককে, জার্মানিতে চিকিৎসা চলে। ১২ আগস্ট তিনি মারা যান।
যদিও হুমায়ুন আজাদের ছোট ভাই ও মামলার বাদী মঞ্জুর কবির বলেছেন, 'রায় নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। ১৮ বছর পর আর রায়ের কী দরকার? যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি আহত হওয়ার পরে যাকে দায়ী করেছিলেন, তাকেই তো বাদ দেওয়া হল। তারপর আর কিছু থাকে না।'
প্রয়াত অধ্যাপক বরাবরই ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোয় মুক্ত সমাজ গড়ে তোলাই ছিল লক্ষ্য তাঁর। বাংলাদেশে তাঁর বই একদিকে জনপ্রিয় হয়েছে, আবার নিষিদ্ধও হয়েছে। তাঁর নারীবাদী গ্রন্থ 'নারী' বাংলাদেশে বিতর্কিত ও জনপ্রিয়। কিন্তু তিনি উগ্রপন্থীদের নিশানায় পড়েন 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' উপন্যাসের জন্য। তাঁকে 'ধর্মত্যাগী' ঘোষণা করে একটি উগ্র সংগঠন। তার পরেই ঘটে এই নির্মম হামলার ঘটনা ঘটে।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি'র পাঁচ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। লেখকের মৃত্যুর পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করা হয়। অভিযোগপত্রে রূপান্তরিত করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় যে, মেডিক্যাল রিপোর্ট, জার্মানি থেকে পাঠানো মৃত্যুর সনদ, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট-সহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, হামলার জেরেই হুমায়ুন আজাদ মারা যান।
একই ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনেও একটি মামলা হয়। ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর মঞ্জুর কবির মামলাটির বৃহত্তর তদন্তের আবেদন করেন। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত শেষ হয়। সিআইডির পরিদর্শক লুৎফর রহমান পাঁচ আসামির নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১০ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ নেয় আদালত। বিচার শুরু হয়। আদালত ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৩ এপ্রিল অবশেষে ঘোষিত হয়েছে চার অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের রায়।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন