
একে একে হারিয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যমণ্ডিত জিনিসগুলো। এবার ভেঙে ফেলা হচ্ছে রবি ঠাকুরের ভাইপো, বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য তথা প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ‘আবাস’। জানা যাচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভেঙে সেখানে তৈরি করা হবে বহুতল। প্রোমোটার ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন।
অবনীন্দ্রনাথের পুত্র অলকেন্দ্রনাথ ঠাকুর তৈরি করেছিলেন এই বাড়িটি। বেশ কয়েকবার ওই বাড়িতে এসে ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর নাম অনুসারেই ওই স্থানটির নাম হয়েছিল ‘অবনপল্লী’। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ক্ষুব্ধ আশ্রমিক থেকে স্থানীয়রা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি ধীরে ধীরে রবি ঠাকুরের সাধের শান্তিনিকেতন চলে যাবে প্রোমোটারদের দখলে?
শুধু ‘আবাস’ নয়, সঙ্গে তার আশেপাশের গাছগুলিও কাটা পড়ে যাবে। যার পাশে রয়েছে সদ্য প্রয়াত বৌদ্ধ পন্ডিত সুনীতি কুমার পাঠকের বাড়ি। যদিও বাড়ি ভাঙার ঘটনায় বিশ্বভারতীর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। যেহেতু বাড়ির সঙ্গে বিশ্বভারতীর কোনও যোগ নেই, বাড়িটি এক মালিকানাধীন, তাই মনে করা হচ্ছে বিশ্বভারতীর তরফে কেউ বক্তব্য দেননি। ১৯৪১ সালে কবিগুরুর প্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় আচার্য হয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ক্ষীরের পুতুল, বুড়ো আংলা, নালক ইত্যাদি তাঁর কালজয়ী লেখা।
আশ্রমিকদের কথায়, স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়ি ভেঙে ফেলা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। অনেকেই আক্ষেপের সঙ্গে বলেছেন, “আদর্শ, ঐতিহ্যের আজ আর কোনও দাম নেই”। কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “হয়তো বিশ্বভারতীর সাথে এই বাড়িগুলির আইনগত কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু প্রকৃত হেরিটেজ রক্ষার স্বার্থে বিশ্বভারতীকে অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করতে হবে। প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগের প্রয়োজন”।
এই বাড়ি ভাঙা নিয়ে প্রবীণ আশ্রমিক ও প্রাবন্ধিক স্বপন ঘোষের কথায়, “এই ঘটনাগুলি ঐতিহ্যের উপরই আঘাত। একটা আদর্শের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধীরে ধীরে ঘিরে ধরেছে বাণিজ্যিক মুনাফালোভী কর্মকাণ্ড। শান্তিনিকেতনের ইতিহাস আগামী প্রজন্ম চাক্ষুষ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে”।
প্রসঙ্গত, গত দুই দশক ধরে শান্তিনিকেতনের জমি প্রোমোটারদের রাজত্বে। কখনও কোপাইয়ের পাড় দখল করে, কখনও আদিবাসীদের জমি দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল। নদীর পাড়, বুক খুবলে মাটি, বালি তুলে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। সেই ক্ষোভের আঁচ এবার পড়ল অবনপল্লীর ‘আবাস’ –এ।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন