অল্পবয়সীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য কি কোভিড টিকা দায়ী? সিদ্দারামাইয়ার প্রশ্নের মধ্যেই বিবৃতি কেন্দ্রের

People's Reporter: গত ৪০ দিনে কর্ণাটকের হাসন জেলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। সিদ্দারামাইয়ার দাবি করেছেন, করোনার পরবর্তীকালে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে বড্ড তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল।
অল্পবয়সীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য কি কোভিড টিকা দায়ী? সিদ্দারামাইয়ার প্রশ্নের মধ্যেই বিবৃতি কেন্দ্রের
গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
Published on

সাম্প্রতিক সময়ে অল্পবয়সীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আকস্মিক মৃত্যুর পরিসংখ্যান অনেকটাই বেড়েছে। তবে কি করোনা পরবর্তী সময়ে প্রাপ্তবয়স্কদের অকালমৃত্যুর জন্য কোনও ভাবে কোভিড ভ্যাকসিন দায়ী? সম্প্রতি এই প্রশ্ন তুলেছেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া। বিশেষ করে সম্প্রতি কর্ণাটকের হাসন জেলার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছেন তিনি। আর এই আবহে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল (আইসিএমআর) এবং এমস যৌথ রিপোর্ট দিয়ে জানাল, হৃদরোগে মৃত্যু হয়ে আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে করোনা ভ্যাকসিনের কোনও সংযোগ নেই।

গত ৪০ দিনে কর্ণাটকের হাসন জেলায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। যার মধ্যে ১৯-২৫ বছর বয়সী রয়েছে ছ'জন, ২৫-৪৫ বছর বয়সী রয়েছে আটজন। এছাড়া বাকি কিছু জনের বয়স ৪৫-৬০-এর মধ্যে এবং বাকিরা ৬০-এর উর্দ্ধে। যা নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

এমনকি গত দু'সপ্তাহে বেঙ্গালুরুর জয়দেব হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৮ শতাংশ। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই হাসন জেলা এবং তাঁর পাশ্বর্বর্তী এলাকার। সকলেই আসছেন সতর্কতামূলক চেকআপের জন্য। জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের মতে, হাসানে গত দু'বছরে ৫০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন হৃদরোগে। যার মধ্যে ১৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া দাবি করেছেন, কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে বড্ড তাড়াহুড়ো করা হয়েছিল। যা এই মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এমনকি বিশ্বব্যাপী এই বিষয়ে কয়েকটা গবেষণায় এমনই ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি করেছেন তিনি। এমনকি এই নিয়ে বিজেপি সরকারকেও আক্রমণ করেন তিনি।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি জানান, করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে গবেষণার জন্য কমিটি তৈরি করা হবে। জয়দেব ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিওভাসকুলার সায়েন্সেসের পরিচালক ডঃ রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে এই কমিটি তদন্ত করবে। এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে সেই তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবে।

এই বিতর্কের মধ্যেই বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফ থেকে একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে জানানো হয়, আকস্মিক এবং অকাল মৃত্যুর সঙ্গে কোভিড ভ্যাকসিনের কোনও যোগ নেই। যে দাবি করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভুল এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে আমজনতার মধ্যে। এর সঙ্গে বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাযুজ্যপূর্ণ নয়।

মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, আইসিএমআর এবং ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল’ (এনসিডিসি) এই নিয়ে গবেষণা করছে। ২০২৩ সালের মে থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে দেশের ১৯টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৪৭টি হাসপাতাল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। মূলত শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার পরেও যারা ২০২১ সালে অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে হঠাৎ মারা গিয়েছেন, তাঁদের নিয়েই গবেষণা চালানো হয়েছিল। পরে আইসিএমআর এবং এমসও একই বিষয় নিয়ে একটি গবেষণা চালায়। দুটি রিপোর্টেই এই মৃত্যুর সঙ্গে কোভিড টিকার কোনও যোগ নেই বলে জানানো হয়েছে।

রিপোর্টে জানানো হয়েছে, যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়া হয়েছিল। সেই তথ্য অনুসারে, টিকা নেওয়া এবং টিকা না-নেওয়া দু'ধরনের রোগীরই মৃত্যুর কারণ হল - দুর্বল হৃৎযন্ত্র, অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, ধমনীতে রক্ত চলাচলে সমস্যার কারণে হৃৎপিণ্ডে যথেষ্ট রক্ত না-পৌঁছোনো, হৃৎপিণ্ডে পেশির দুর্বলতার কারণে সারা শরীরে রক্ত পৌঁছোতে না-পারা।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, যাঁদের হৃদপিণ্ডের সমস্যা ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে ধূমপান, অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান, বিশেষ করে সারা রাত জেগে অত্যধিক মদ্যপান আচমকা মৃত্যুর কারণ হিসাবে উঠে এসেছে। এছাড়া দুর্বল হৃৎপিণ্ড যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের কারণ হিসেবে উঠে এসেছে অজান্তেই অতিরিক্ত ব্যায়াম, নাচ, মানসিক উত্তেজনা।

অন্যদিকে, পারিবারিক ভাবে দুর্বল হৃৎপিণ্ডের সমস্যা রয়েছে যাঁদের, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরে তাঁদের আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। তেমনি যাঁরা ধূমপান ও সারা রাত ধরে মদ্যপান করেন, তাঁদের আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছে যথাক্রমে দুই এবং ছ’গুণ। দুর্বল হৃৎপিণ্ড যাঁদের, তাঁদের অতিরিক্ত পরিশ্রম আচমকা মৃত্যুর সম্ভাবনা তিন গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

অল্পবয়সীদের হার্ট অ্যাটাকের জন্য কি কোভিড টিকা দায়ী? সিদ্দারামাইয়ার প্রশ্নের মধ্যেই বিবৃতি কেন্দ্রের
Vaccination: শিশুদের টিকাকরণে পিছিয়ে ভারত সহ ৮ দেশ, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in