
শিশুদের টিকাকরণে (Vaccination) পিছিয়ে ভারত। ভারত-সহ আটটি দেশে টিকা না দেওয়া শিশুর সংখ্যা গোটা বিশ্বের মধ্যে অর্ধেক। সম্প্রতি এমনই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে রিপোর্টে। আর যা সামনে আসার পর থেকেই শুরু হয়েছে উদ্বেগ-বিতর্ক।
সম্প্রতি Lancet জার্নালে ‘a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2023’ নামক এক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। সেখানে শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের ২০৪টি দেশ নিয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। ১৯৮০ সাল থেকে ২০২৩ সাল - এই সময়ের মধ্যে শিশুদের টিকাকরণ প্রক্রিয়া কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে গবেষণা চালায় আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল। আর তাতেই উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জন্মের পর প্রথম বছরেই শিশুদের ডেপথেরিয়া, টিটেনাস এবং হুপিং কাশির পার্টুসিস টিকা দেওয়া নিয়ম। কিন্তু রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৫৭ লক্ষ শিশুদের এই টিকাগুলি দেওয়া হয়নি, যার মধ্যে ভারতের ১৪ লক্ষ ৪০ হাজার শিশু রয়েছে। ভারত ছাড়াও এই তালিকায় যে সাতটি দেশ রয়েছে সেগুলি হল - নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইন্দোনেশিয়া। এর জন্য সামাজিক অসাম্যকেই দায়ী করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের গবেষক, ডঃ জোনাথন মোসার জানিয়েছেন, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির জন্য শিশুদের এই টিকাগুলি দেওয়া হয়। সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিশুদের এই টিকাকরণ অত্যন্ত জরুরী।
রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮০ সালে কোনও টিকা হয়নি অর্থাৎ 'শূন্য ডোজ' পাওয়া শিশুদের অর্ধেকই (৫৩.৫ শতাংশ) মূলত ৫ টি দেশে রয়েছে - ভারত, চিন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ। শিশুদের নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য গত ৫০ বছর ধরে যে প্রচেষ্টা চলছে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনও অনেকটাই দেরি বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) -এর তরফ থেকে শিশুদের জন্য ১১টি টিকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জানা গেছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হাম, পোলিও এবং যক্ষ্মা প্রতিরোধী টিকাকরণে ভাল উন্নতি চোখে পড়েছিল। ১৯৮০ সালে টিকা না পাওয়া শিশুর সংখ্যা যেখানে ৫ কোটি ৮৮ লক্ষ ছিল, ২০১৯ সালে তা কমে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ হয়। কিন্তু করোনার পর সেই উদ্যোগ ধাক্কা খায়।
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হামের টিকাকরণে অবনতি দেখা গেছে ১০০টি দেশে। ডিপথেরিয়া, টিটেনাস, হুপিং কাশি, হাম, পোলিও, যক্ষ্মার মতো গুরুত্বপূর্ণ টিকাগুলির মধ্য়ে অন্তত পক্ষে একটিতে পতন দেখা গেছে ২১টি উচ্চ আয়ের দেশে।
গবেষকদের মতে, করোনা অতিমারির পর থেকে এই সামাজিক অসাম্য বেড়েছে। সাধারণ মানুষ বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। টিকা নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে দ্বিধার জন্ম হচ্ছে। এর ফলে সার্বিক টিকাকরণের চিত্রটা এতটা সংকীর্ণ। গবেষকদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে বিশ্বব্যাপী মহামারি নেমে আসবে। হাম, পোলিও, ডিপথেরিয়ার মহামারি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। গবেষকদের দাবি, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে টিকার রক্কাকবচে মুড়ে ফেলার যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, এভাবে চললে সেটা সম্ভব নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন