
মানুষের মস্তিষ্কে বাড়ছে মাইকোপ্লাস্টিকের পরিমাণ। গত ৮ বছরে যা ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে স্মৃতি হারানো, শরীরের সামগ্রিক বিকাশ রোধ থেকে শুরু করে স্নায়বিক নানা রোগের জন্ম দিচ্ছে। সম্প্রতি এমনই উদ্বেগের কথা জানালেন ইউনির্ভাসিটি অফ নিউ মেক্সিকো হেলথের বিজ্ঞানীরা।
আলবুকার্কের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন জানান, “আমাদের মস্তিষ্কে অনেক বেশি মাত্রায় প্লাস্টিক রয়েছে। যা আমরা কখনও কল্পনাও করতে পারব না। এর ফলে আমরা কখনও সুস্থ থাকতেও পারব না”। সোমবার ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যে সমস্ত মানুষের মস্তিষ্কের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাতে গড়ে ৭ গ্রাম করে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। যা একটি প্লাস্টিকের চামচের ওজনের সমান। তাঁদের মধ্যে কারও শরীরে মিলেছে পেট প্লাস্টিক, যা দিয়ে তৈরি হয় জলের বোতল। আবার কারও শরীরে মিলেছে পলিস্টেরাইন, যা থাকে খাবারের কন্টেনারে। এছাড়া কিছু মানুষের মস্তিষ্কে মিলেছে পলিইথাইলিন, যা দিয়ে তৈরি হয় প্লাস্টিকের ছোট ক্যারি ব্যাগ। আমার অনেকের শরীরে মিলেছে দু-তিন রকমের প্লাস্টিকের কণাও।
গবেষণায় আরও জানানো হয়েছে, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশে আক্রান্ত এমন ১২ জন প্রাপ্তবয়স্কের মস্তিষ্কের পেশি পরীক্ষা করে দেখা গেছে মস্তিষ্কে থাকা প্লাস্টিকের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ১০ গুণ বেশি। এছাড়া ২০২৪ সালের শুরুর দিকে মারা গিয়েছেন এমন ২৪ জন মৃত মানুষের মস্তিষ্কের সঙ্গে ২০১৬ সালের ২৮ জন মৃত মানুষের মস্তিষ্কের পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে ৮ বছরের মধ্যেই মস্তিষ্কে মাইক্রো ও ন্যানো প্লাস্টিকের পরিমান বেড়ে গিয়েছে ৫০ শতাংশ।
এই পর্যালোচনা আরও নিশ্চিত করতে গবেষকরা ১৯৯৭ ও ২০১৩ সালের মস্তিষ্কের পেশির নমুনাও পরীক্ষা করেছে। গবেষকরা জানান, এখানেও প্লাস্টিকের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের তুলনায় বেড়েছে দ্বিগুণ হারে এবং ২০২৪ সালের তুলনায় ৪ গুণ হারে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক দিনের পর দিন শরীরে ঢুকে রক্তে মিশে নানা রকম জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। রক্তে মেশার ফলে ইনসুলিন ক্ষরণে প্রভাব ফেলছে। ফলে বাড়তে পারে ডায়বিটিস। এছাড়া প্লাস্টিক শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। যার ফলে পুরুষদের শুক্রাণুর পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং মহিলাদের হরমোন ক্ষরণে বাধা তৈরি করে। হতে পারে বিভিন্ন স্নায়বিক রোগ।
তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন, কীভাবে এই প্লাস্টিক রক্তবাহের দেওয়াল ভেদ করে ভিতরে ঢুকে যেতে পারে, কীভাবে তা মস্তিষ্কে পৌঁছাচ্ছে, সেই গতিপথ এখনও অধরা। তাঁদের ধারণা, খাবারের মধ্যে দিয়েই শরীরে প্রবেশ করছে প্লাস্টিকের কণা। বর্তমান যুগে পলিথিন হলো নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী। প্লাস্টিক কন্টেনারেও খাবার খাচ্ছেন অনেকে। এর মধ্য দিয়েই এই প্লাস্টিক কণাগুলি মস্তিষ্কে প্রবেশ করে বলে অনুমান।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন