
রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাসকে বৃহস্পতিবার সরযূ নদীতে ‘জলসমাধি’ দেওয়া হয়। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিস্তর বিতর্ক। ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এই রকম 'অমানবিক মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনা' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেটিজেনরা। তাঁদের দাবি, এটা নাকি পুরোটাই অশিক্ষার পরিণতি। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলেও। অন্যদিকে, ‘জলসমাধি’র ফলে উঠে আসছে পরিবেশবিধির কথাও।
প্রচলিত হিন্দু রীতি অনুযায়ী, জলসমাধির মাধ্যমে নাকি আত্মার মোক্ষ লাভ নিশ্চিত। কারণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পঞ্চভূতে মিশে যায় নশ্বর দেহ। এই রীতি একমাত্র সাধু-সন্ত এবং পুরোহিতদের জন্য প্রযোজ্য। কারণ তাঁরা জাগতিক আসক্তি থেকে দূরে থাকেন।
বুধবার সকালে লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সস –এ প্রয়াত হন ৮৫ বছরের সত্যেন্দ্র দাস। বৃহস্পতিবার বিকালে তাঁর মরদেহ রথে করে ঘোরানো হয় শহরে। এরপর পালকিতে করে দাসের দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সরযূ নদীতে। যেখানে তুলসীদাস ঘাট থেকে নৌকা করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মাঝ নদীতে।
এরপর প্রয়োজনীয় ধর্মীয় উপাচার পালন করে, বৈদিক স্তোত্রপাঠ করতে করতে ভারী কোনও বস্তুর সঙ্গে দেহটি বেঁধে জলে ফেলে দেওয়া হয়। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নৌকা করে এনে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেহটিকে মাঝ নদীতে ফেলে দেওয়া হল। (সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করে নি পিপলস রিপোর্টার)
এই ঘটনার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সাধু-সন্তদের অনেকে বলেন এই প্রথা বহু প্রাচীন। যদিও তা বর্তমানে খুবই বিরল। এবিষয়ে রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী মুরালীধরানন্দ মহারাজ এক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “অতীতে এই রীতি প্রচলিত ছিল। তবে পরবর্তীতে তা নিষিদ্ধ হয়। কেন হয় তা আমার জানা নেই। তবে এখন এমন ঘটনা ঘটে না। বহু দিন আগেই জলসমাধি বন্ধ হয়ে গেছে। তবে আবার কী কারণে এমন ঘটনা ঘটলা, সেটা ওঁরাই বলতে পারবেন”।
অন্যদিকে, জলসমাধির ফলে উঠে আসছে পরিবেশবিধির কথাও। এ প্রসঙ্গে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, “এর ফলে জলের দূষণ হবে ভয়ঙ্কর। কারণ কোনও দেহ জলে ফেলে দিলে জৈব রাসায়নিক অক্সিজেনের চাহিদা বাড়বে। ফলে জলের গুণগত মান কমতে থাকবে। তাছাড়া দেহটিতে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধবে। যা জলের ক্ষতি করবে। ফলে বাড়বে জলদূষণের মাত্রা। আজকের দিনে এমন ঘটনা সত্যিই আশ্চর্য্যের”।
জলসমাধি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধীরাও। তাঁদের অভিযোগ, মোদী সরকার যেখানে জলদূষণ রোধের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, সেখানে এই ভাবে দেহ জলে ফেলে জলদূষণ করা হচ্ছে। আর বিজেপি এখানে নীরব দর্শক। সত্যিই এটা দুর্ভাগ্যজনক।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন