
গুইলেন-বারি সিন্ড্রোম (জিবিএস) নিয়ে রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালকে সতর্ক করল স্বাস্থ্য দফতর। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যাতে আর মৃত্যু না হয়, পাশাপাশি, এই রোগে আক্রান্ত হলে কী ধরণের চিকিৎসা দিতে হবে, পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত রাখতে হবে সেই বিষয়ে ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে হাসপাতালগুলিকে।
‘ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস’ (আইএপি) এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিশেষসচিব (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) অনিরুদ্ধ নিয়োগী, স্বাস্থ্য অধিকর্তা স্বপন সোরেন, মেডিক্যাল কলেজগুলির আধিকারিক, শিশু ও স্নায়ু রোগ চিকিৎসকরা এবং ওই সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি বসন্ত খালাতকর, কোষাধ্যক্ষ তথা শিশু রোগ চিকিৎসক অতনু ভদ্র।
অতনু বলেন, ‘‘জিবিএসে কে বা কারা আক্রান্ত হবেন তা আগাম বলা মুশকিল। পুণেতে জলে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে আচমকাই অনেকে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তবে রাজ্যে এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তা-ও আগাম প্রস্তুত থাকার জন্যই এই বৈঠকের আয়োজন”।
সূত্রের খবর, স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এই রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীদের শারীরিক অবস্থা কী রকম রয়েছে, কী ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে নিয়মিত। প্রতিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ যাতে অযথা আতঙ্কিত না হন। পাশাপাশি, আচমকা এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, সেটা মোকাবিলার জন্য পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শহরের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজগুলির স্নায়ু রোগ বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে অন্তত দুটি করে শয্যা তৈরি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুদের চিকিৎসার জন্য পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটেরও দুটি শাখা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এমনকি দুই ক্ষেত্রে কী ধরণের চিকিৎসা হবে, তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে বৈঠকে। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানিয়েছেন, “প্রয়োজন মতো ক্রিটিক্যাল কেয়ারের চিকিৎসা সম্পর্কে নির্দিষ্ট এসওপি জারি করা হবে”।
গুইলেন-বারি সিন্ড্রোমে শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে, কী ভাবে তা বোঝা যাবে? বৈঠকে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তার উত্তরে স্নায়ু রোগ চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় বলেন, ‘‘শিশুদের হাত-পা ঝিনঝিন কিংবা জোর কমে গেলে স্নায়ু রোগ চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। চিকিৎসক যদি দেখেন শিশুর হাত-পায়ের রিফ্লেক্স (প্রতিবর্ত ক্রিয়া) চলে গিয়েছে, তখন ক্লিনিক্যালি সন্দেহ করা হবে সেটি জিবিএসের লক্ষণ”।
ওই চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, জিপিএস-এ আক্রান্ত কিনা, সেটা আরও নিশ্চিত হতে হলে, শিশুর শিরদাঁড়া থেকে জল (সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড) নিয়ে ও ‘নার্ভ কন্ডাকশন টেস্ট’ (এনসিভি) করতে হবে। রিপোর্ট পজিটিভ এলে, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তবে ভেন্টিলেশনে দিতে হবে তেমনটা নয়, আক্রান্ত ওই শিশুকে কড়া পর্বেক্ষণে রাখতে হবে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, জিবিএস আক্রান্তদের প্রয়োজন ছাড়া ইন্ট্রাভেনাস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইঞ্জেকশন বা প্লাজমাফেরেসিস চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। শ্বাসকষ্ট, খাবার গিলতে এবং কথা বলতে অসুবিধা হলেই ওই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গুইলেন-বারি সিন্ড্রোমে বাংলায় ইতিমধ্যে মৃত্যু হয়েছে দশ বছরের এক শিশু-সহ দু’জনের। জানা গেছে, রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট ১৭ জন আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন