
কাশির সিরাপ ঘিরে একের পর এক শিশুমৃত্যুতে উদ্বেগ ছড়িয়েছে গোটা দেশজুড়ে। মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়ায় সম্প্রতি এর জেরে ২০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাজারচলতি ‘কোল্ডরিফ’ নামে এক কাশির সিরাপ খাওয়ার পরই ওই শিশুদের শারীরিক অসুস্থতা বাড়ে এবং এর জেরে মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে সেই অভিযোগের সত্যতার ইঙ্গিত মিলেছে। বিতর্কের মাঝে এবার সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে সতর্ক করলেন কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া’ (ডিসিজিআই) রাজীব সিংহ রঘুবংশী। তিনি জানিয়েছেন, বাজারে কোনও কাশির সিরাপ ছাড়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে তার গুণমান পরীক্ষা করতে হবে।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস’-এর তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, ওষুধ তৈরির প্রতিটি ধাপেই গুণমান পরীক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। ওষুধ উৎপাদনের আগে কাঁচামাল পরীক্ষা থেকে শুরু করে, বাজারে সরবরাহের আগে প্রতিটি ব্যাচের মান যাচাই - সবই নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের।
নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিটি ওষুধ প্রস্তুতকারকের একটি উন্নত ‘ভেন্ডার কোয়ালিফিকেশন সিস্টেম’ থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ, অনুমোদিত এবং নির্ভরযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকেই কাঁচামাল কেনা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, মধ্যপ্রদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু ব্যাচের ওষুধের গুণমান মানদণ্ডে পৌঁছয়নি। এমনকি, অনেক সংস্থা নিয়ম মেনে প্রত্যেক ব্যাচের ওষুধ পরীক্ষা করেনি বলেও উঠে এসেছে তদন্তে।
নিয়ম অনুসারে, প্রস্তুতকারককে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল এবং তৈরি হওয়া ওষুধের প্রত্যেক ব্যাচ পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। ডিসিজিআই রাজীব সিংহ রঘুবংশী চিঠিতে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সেই নিয়েই সতর্ক করেছেন।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরে ‘কোল্ডরিফ’ নামের কাশির সিরাপ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এর জেরে মধ্যপ্রদেশে অন্তত ২০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজস্থানেও মিলেছে একাধিক মৃত্যুর খবর। যার জেরে ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবসহ একাধিক রাজ্য নিষিদ্ধ হয়েছে এই ওষুধ। অভিযোগ, এই সিরাপে বিপজ্জনক ডাইইথিলিন গ্লাইকোল (Diethylene Glycol) নামক রাসায়নিক পাওয়া গেছে, যা কিডনি বিকল করে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এই কাশির সিরাপ বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে, শিশুমৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত কোনও কাশির সিরাপ বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছে কি না।
অন্যদিকে, ‘ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নড্ডাকে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে সিবিআই তদন্তের দাবিতে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলাও দায়ের হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন