
বিশ্বব্যাপী প্রতি ছ'জনের মধ্যে একজন মানুষ ভুগছেন একাকিত্বে (Loneliness)। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) 'From Loneliness to Social Connection' নামক একটি নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ একাকিত্বে ভুগছেন। যার ফলে প্রতি ঘন্টায় ১০০ জন মারা যাচ্ছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৪ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮,৭১,০০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই কারণে।
হু-এর রিপোর্ট বলছে ২০২০ সালে কোভিডের পর থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে একাকিত্ব আরও বেশি করে প্রভাব ফেলেছে। হু বলছে, এই একাকিত্ব কেবল মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেই নয়, এর ফলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, বিশেষ করে তরুণ এবং শহরাঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে একাকিত্বের সমস্যা বেড়েছে।
রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বব্যাপী একাকিত্বের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ভুগছেন কিশোর এবং তরুণ সমাজ। ১৩-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ২০.৯ শতাংশ এবং ১৮-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৭.৪ শতাংশ একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন। রিপোর্ট বলছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলিতে এই একাকিত্বের সমস্যা বেশি দেখা গেছে। সেখানে প্রায় চারজনের মধ্যে একজন (২৪ শতাংশ) মানুষ এই সমস্যায় ভুগছেন।
উচ্চ আয়ের দেশগুলিতে প্রায় দ্বিগুণ (প্রায় ১১ শতাংশ) একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন। পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে (২১ শতাংশ) এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (১৮ শতাংশ) একাকিত্বে ভোগা মানুষের সন্ধান মিলেছে। তবে, ইউরোপীয় অঞ্চলে এই হার সবচেয়ে কম, প্রায় ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে, জার্নাল অফ ফ্যামিলি মেডিসিন অ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ারে প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে, করোনাকালে ভারতে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে মানসিক সমস্যা। প্রতিবেদন অনুসারে, এখানের ২২ শতাংশ মানুষ একাকিত্ব অনুভব করেন। যার মধ্যে ১৬-২৪ বছর বয়সী ৪০ শতাংশ এবং ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ২৯ শতাংশের বেশি একাকিত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন।
ভারতে এই একাকিত্ব সমস্যাটি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতি ১০.১ শতাংশ মানুষ একাকিত্বে ভুগছেন। শহরাঞ্চলে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। দিল্লি, মুম্বই এবং বেঙ্গালুরুর মতো মেট্রো সিটিতে যুবকদের মধ্যে মানসিক চাপ এবং একাকিত্বের সমস্যা বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এই একাকিত্ব মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশাল প্রভাব ফেলে। যার ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও, এটি স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ডিমেনশিয়া এবং আলঝাইমারের মতো রোগের সাথে যুক্ত। এর ফলে হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এই রোগে লড়াই করা মানুষরা শারীরিক এবং মানসিক উভয় ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
এবিষয়ে হু-এর ডিরেক্টর জেনারেল বলেন, "বর্তমান যুগে যখন সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তখন বেশি সংখ্যক মানুষ নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন এবং একাকী মনে করছেন"। তিনি আরও বলেন, "ব্যক্তি, পরিবার এবং সম্প্রদায়ের উপর এর প্রভাব ছাড়াও, একাকিত্ব স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমাজের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতি করতে থাকবে"।
রিপোর্টে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উপর নেতিবাচক সমাজ মাধ্যমের প্রভাব সম্পর্কে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন