
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া-র (FTII) ছাত্র সংগঠন। এফটিআইআই-এর ওই ছাত্র সংগঠনের বক্তব্য অনুসারে, দ্য কেরালা স্টোরির জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শুধু হতাশাজনকই নয়, বিপজ্জনকও।
২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য কেরালা স্টোরি ৭১ তম ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড-এ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। এই ছবির পরিচালক সুদীপ্ত সেন পেয়েছেন সেরা পরিচালকের পুরস্কার এবং এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফিও ও পুরস্কৃত হয়েছে। যে পুরস্কার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে এফটিআইআই-এর ছাত্র সংগঠন জানিয়েছে, দ্য কেরালা স্টোরি কোনও চলচ্চিত্র নয়, বরং এটা একটা অস্ত্র।
বিবৃতিতে ছাত্র সংগঠন জানিয়েছে, রাষ্ট্র আবারও তার অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল, সিনেমার নাম করে প্রচার চালানো হলে, বিশেষ করে তা যদি তাদের ঘৃণাপূর্ণ এজেন্ডার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তারা তা সমর্থন করবে। কেরালা স্টোরি কোনও চলচ্চিত্র নয়। এটি একটি অস্ত্র। এক মিথ্যা আখ্যান। যার মাধ্যমে ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, শিক্ষা এবং প্রতিরোধকে অগ্রাহ্য করে মুসলিম সম্প্রদায়কে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “যখন সরকার-সমর্থিত কোনও সংস্থা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য এবং ভীতি ছড়ায় এমন কোনও চলচ্চিত্রকে তুলে ধরে, তখন এটি কেবল 'শিল্পকে স্বীকৃতি' দেয় না, এটি হিংসাকে বৈধতা দেয়। এই ঘটনা ভবিষ্যতের গণপিটুনি, সামাজিক বর্জন এবং রাজনৈতিকভাবে অন্যায়ের চিত্রনাট্য তৈরি করে।"
ছাত্রদের বিবৃতিতে দ্য কেরালা স্টোরির জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তির তীব্র সমালোচনা করে আরও বলা হয়েছে, “ইসলামোফোবিয়া এখন পুরষ্কারযোগ্য তা আমরা মেনে নিতে চাই না এবং আমরা চুপ থাকতেও রাজী নই। কারণ আমরা যে শিল্পে প্রবেশ করতে চাই তা মিথ্যা, গোঁড়ামি এবং ফ্যাসিবাদী মতাদর্শকে পুরস্কৃত করার জন্য পুনর্গঠিত হচ্ছে। রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে: প্রচারকে পুরষ্কার দেওয়া হলেই তা সত্য হয়ে যায় না এবং আমরা, ছাত্র এবং নাগরিক হিসাবে, এই ঘটনাকে উস্কানি, হিংসা বলা বন্ধ করব না।”
দ্য কেরালা স্টোরির জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কেরালার বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এক বিবৃতিতে বিজয়ন বলেন, "'দ্য কেরালা স্টোরি'-এর জন্য জাতীয় পুরস্কারকে কেবল সাংস্কৃতিক দুর্নীতির উদযাপন হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চলচ্চিত্রের অপব্যবহার করে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে কেরালার ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যকে অপমান করে এবং রাজ্যকে মানহানিকর আলোকে উপস্থাপন করে, এমন একটি চলচ্চিত্রকে সম্মানিত করা হয়েছে।"
গত ১ আগস্ট নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) বিজয়ন জানান, "কেরালার ভাবমূর্তি নষ্ট করার এবং সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বীজ বপন করার স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া একটি চলচ্চিত্রকে সম্মানিত করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কারের জুরিরা সংঘ পরিবারের বিভেদমূলক আদর্শে নিহিত একটি আখ্যানকে বৈধতা দিয়েছেন। কেরালার মাটি, যা সর্বদা সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সম্প্রীতি এবং প্রতিরোধের আলোকবর্তিকা হিসেবে দাঁড়িয়েছে, এই সিদ্ধান্তে গুরুতরভাবে অপমানিত হয়েছে। কেবল মালয়ালিদের নয়, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলেরই সত্য এবং আমাদের প্রিয় সাংবিধানিক মূল্যবোধের রক্ষায় তাদের আওয়াজ তোলা উচিত।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন