
বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যাকে যা খুশি বলা যাবে না। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটাক্ষ, রসিকতা সংক্রান্ত মামলায় এই পর্যবেক্ষণ শীর্ষ আদালতের। পাশাপাশি, পাঁচ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চে ছিল কিউর এসএমএ ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার করা একটি আবেদনের শুনানি। সমাজমাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কটাক্ষ, রসিকতা বন্ধ করা নিয়ে আবেদন দায়ের করা হয়। আবেদনে 'ইন্ডিয়াস গট ল্যাটেন্ট'-এর সময় রায়না, বিপুন গোয়েল, বলরাজ পরমজিৎ সিং ঘাই, সোনালি ঠক্কর এবং নিশান্ত জগদীশ তানওয়ারের মতো ইনফ্লুয়েন্সারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলাটিতে রণবীর এলাহবাদিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি 'ইন্ডিয়াস গট ল্যাটেন্ট' শো-তে করা মন্তব্যের জেরে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছ সময় রায়না এবং রণবীর এলাহবাদিয়া। মহারাষ্ট্র ও অসম পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। জল গড়ায় সুপ্রিম কোর্টেও। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, "তাঁর মন্তব্য অশ্লীল এবং সমাজকে লজ্জায় ফেলেছে।" যদিও আদালত তাঁকে অন্তর্বর্তী সুরক্ষা প্রদান করেছিল।
অন্যদিকে, ক্ষমা চাওয়া নিয়ে আদালতে পাল্টা হলফনামা দাখিল করেন সময় রায়না। যা নিয়ে এদিন শীর্ষ আদালত সমালোচনা করে বলেন, "নিজেকে অত্যন্ত নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন উনি এবং তারপর ক্ষমা চেয়েছিলেন"। এরপরেই বিচারপতি সূর্য কান্তের কড়া বার্তা, "ক্ষমা চাওয়া একটি জিনিস... কিন্তু এর জন্য কি একটি ফাউন্ডেশনকে প্রতিবার আদালতে আসতে হবে? যদি কোনও ব্যক্তিকে লাগাতার হেনস্থা করা হয় তবে কী হবে?" তিনি আরও বলেন, "অধিকার ও কর্তব্যের ভারসাম্য থাকা উচিত।"
বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, "হাস্যরস জীবনের একটি অংশ এবং আমরা নিজেদের নিয়ে রসিকতা করতে পারি। কিন্তু যখন আপনি অন্যদের নিয়ে মজা করতে শুরু করেন, তখন সংবেদনশীলতার লঙ্ঘন হয়। ভারত একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। এখানে বহু সম্প্রদায় রয়েছে। যখন আপনি নিজের বক্তব্যের বাণিজ্যিকীকরণ করছেন, তখন একটি সম্প্রদায়কে ব্যবহার করে তাদের অনুভূতিতে আঘাত করতে পারেন না।"
এরপরেই শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করে বেঞ্চ জানিয়েছে, "আজ বিষয়টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে হচ্ছে। পরের বার এটি মহিলা, প্রবীণ নাগরিক, শিশুদের নিয়ে হবে - এর শেষ কোথায়?"
যদিও সিনিয়র অ্যাডভোকট সিং আদালতে পরামর্শ দেন, ইনফ্লুয়েন্সারদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে তাঁদের প্রতিবন্ধী এবং বিরল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপকারে আসে এমন কার্যকলাপে অবদান রাখতে বলা যেতে পারে। এটাই হবে সর্বোত্তম ক্ষমা প্রার্থনা।
আদালতের নির্দেশ, পাঁচ ইনফ্লুয়েন্সারকে তাঁদের ইউটিউব চ্যানেল ও পডকাস্টে ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি, হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে যে তাঁরা সেই নির্দেশ মেনেছেন। এছাড়া তাঁরা কী শাস্তি বহন করতে ইচ্ছুক সেটাও আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন