
চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালের শেষকৃত্য সম্পন্ন। মঙ্গলবার দুপুর ২টো নাগাদ মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্ক শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে কিংবদন্তী এই পরিচালকের। সোমবার সন্ধ্যা ৬ টা ৩০ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
বহু দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কিডনি সংক্রান্ত সমস্যাও ছিল পরিচালকের। গত ১৪ ডিসেম্বর নিজের ৯০ তম জন্মদিন পরিবার ও বন্ধুদের সাথে নিয়ে আনন্দের সাথে পালন করেছিলেন তিনি। শারীরিক অসুস্থতা বা বয়স, কিছুই তাঁর কাজে বাধা হতে পারেনি। ছবির কাজ চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।
শ্যাম বেনেগালের মৃত্যুতে ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক যুগের অবসান হল। হিন্দি ছবির জগতে অন্য ধারার ছবি তৈরিতে জোয়ার এনেছিলেন এই পরিচালক। বিনোদন নয়, বাস্তবতা ফুটে উঠত তাঁর পরিচালিত ছবিগুলিতে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বর্ষীয়ান পরিচালকের ১০ টি অন্যতম সিনেমা –
অঙ্কুর (১৯৭৪)ঃ ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় বেনেগালের প্রথম হিন্দি ছবি ‘অঙ্কুর’। এই ছবিতে গ্রামীণ ভারতের বর্ণ ও লিঙ্গ বৈষম্যকে সুন্দর ভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। এক দলিত মহিলার সঙ্গে বাড়িওয়ালার অবৈধ সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। ছবিতে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন শাবানা আজমি। হিন্দি ভাষায় সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য এই ছবিটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পান শাবানা আজমিও।
নিশান্ত (১৯৭৫)ঃ গ্রামীণ ভারতের সামন্ততান্ত্রিক অত্যাচার, ফ্যাসিবাদ এবং যৌন শোষণের ছবি চিত্রায়িত হয়েছে এই সিনেমায়। গিরিশ কারনাড, শাবানা আজমি, অমরিশ পুরী, নাসিরুদ্দিন শাহ, অনন্ত নাগ, স্মিতা পাটিলের মতো কলাকুশলীরা অভিনয় করেছেন ছবিতে। সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছে ‘নিশান্ত’।
মন্থন (১৯৭৬)ঃ ভারতের হোয়াইট রেভলিউশনের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবিটি।অভিনয় করেছেন – স্মিতা পাটিল, গিরিশ কারনাড, নাসিরুদ্দিন শাহ, অমরিশ পুরী। ক্ষমতায়নের একটি কালজয়ী গল্প ‘মন্থন’ সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতেছে। এই সিনেমার গান ‘মেরো গাম কাঠা পেরে’ গ্রামীণ উন্নয়নের সংগীত হয়ে ওঠে।
ভূমিকা (১৯৭৭)ঃ মারাঠি অভিনেত্রী হাঁসা ওয়াদকরের জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি। যার মূল চরিত্রে রয়েছেন স্মিতা পাটিল। ছবিটির জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন স্মিতা পাটিল। এছাড়া ফিল্ম ফেয়ারে সেরা সিনেমা হিসাবে পুরস্কার জিতেছে ‘ভূমিকা’।
জুনুন (১৯৭৮)ঃ এক ভারতীয় যুবক এবং ব্রিটিশ নারীর প্রেমের গল্প চিত্রায়িত হয়েছে ‘জুনুন’ সিনেমায়। শশী কাপুর প্রযোজিত সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন - শাবানা আজমি, নাফিসা আলি, জেনিফার কেন্ডল, নাসিরুদ্দিন শাহ। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছে।
মান্ডি (১৯৮৩)ঃ ‘মান্ডি’ ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে হায়দ্রাবাদের এক যৌনপল্লির ঘটনা। ছবিতে অভিনয় করেছেন - শাবানা আজমি, স্মিতা পাটিল, নাসিরুদ্দিন শাহ। চলচ্চিত্রটি সেরা শিল্প দিকনির্দেশনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতেছে। সামাজিক রীতিনীতির সাহসী সমালোচনাকারী হিসাবে উল্লেখযোগ্য ছবিটি।
সুরজ কা সাত্বভা ঘোড়া (১৯৯২)ঃ এক পুরুষের জীবনে বিভিন্ন সময়ে আসা তিন নারীর গল্প নিয়ে নির্মিত ছবিটি। অভিনয় করেছেন - রজিত কাপুর, নিনা গুপ্তা, রাজেশ্বরি সাচদেব, অমরিশ পুরী। হিন্দিতে সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জেতে ছবিটি।
জুবেইদা (২০০১)ঃ প্রেম এবং ট্র্যাজেডির নিয়ে লেখা কাহিনী ‘জুবেইদা’ তার আকাঙ্ক্ষা এবং সামাজিক প্রত্যাশার মধ্যে ধরা একজন মহিলার গল্প বলে। খালিদ মোহাম্মদের লেখা এবং কারিশ্মা কাপুর অভিনীত ছবিটি হিন্দিতে সেরা ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতেছে।
ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর (২০০৮)ঃ কৌতুক সিনেমা ‘ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর’ এক গ্রামীণ জনজীবনকে চিত্রায়িত করে। সিনেমায় শ্রেয়াস তালপাডের অভিনয় চর্চিত হয়েছে। আকর্ষক আখ্যান এবং সম্পর্কিত চরিত্রগুলির জন্য প্রশংসিত হয়েছিল ছবিটি।
ওয়েল ডান আব্বা (২০১০)ঃ দুর্নীতি ও আমলাতন্ত্রকে নিয়ে এই মজাদার ব্যঙ্গাত্মক সিনেমাটি চিত্রিত হয়েছে। মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন বোমান ইরানি। সিনেমাটি সামাজিক ইস্যুতে সেরা চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার জিতেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন