
বেজে গেছে রাজ্যের সপ্তদশ বিধানসভা নির্বাচনের দামামা। প্রথম দু’দফার জন্য প্রচার এখন তুঙ্গে। আট দফায় অনুষ্ঠিত হতে চলা এবারের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ আসনের জন্য ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আগামী ২৭ মার্চ। শেষ হবে ২৯ এপ্রিল। ভোট গণনা ২ মে।
১৯৫২ সালে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন আসন ছিলো ২৩৮। ওই নির্বাচনে ২৩৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কংগ্রেস জয়ী হয় ১৫০ আসনে। প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ছিলো ৩৮.৮২ শতাংশ। সেবার কিষাণ মজদুর প্রজা পার্টি ১২৯ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পায় ১৫ আসন। ৮৬ আসনে লড়াই করে সিপিআই পায় ২৮ আসন। ভোটের শতকরা হার ১০.৭৬ শতাংশ। ভারতীয় জনসংঘ ৮৫ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয় ৯ আসনে। প্রাপ্ত ভোট ৫.৫৮ শতাংশ। ফরওয়ার্ড ব্লক পেয়েছিলো ১১ আসন। অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা পায় ৪ আসন। প্রাপ্ত ভোট ২.৩৭ শতাংশ। সেবার মুখ্যমন্ত্রী হন বিধান রায়। বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু।
১৯৫৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৫১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪৬.১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয় কংগ্রেস। সিপিআই ১০৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পায় ৪৬ আসনে। প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি পায় ২১ আসন এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ৮ আসন। ভারতীয় জনসংঘকে সেবার ফিরতে হয় শূন্য হাতে। যদিও অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা পায় ২৫ আসন। সেবার নির্বাচন হয়েছিলো ২৫২ আসনে। বামজোট ইউনাইটেড লেফট ইলেকশন কমিটি সম্মিলিত ভাবে জয়ী হয় মোট ৮০ আসনে। যার মধ্যে সিপিআই ৪৬, প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টি ২১ এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ৮ আসন এবং অন্যান্যরা ৫ আসনে। এবারও মুখ্যমন্ত্রী হন বিধান রায় এবং বিরোধী দলনেতা জ্যোতি বসু।
১৯৬২ সালের নির্বাচনে ২৫২ আসনের মধ্যে কংগ্রেস জয়ী হয় ১৫৭ আসনে। ভোটের শতকরা হার ৪৭.২৯ শতাংশ। সিপিআই পায় ৫০ আসন। ভোট শতাংশ ২৪.৯৬ শতাংশ। প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টি ৫ আসন, ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩, আর এস পি ৯ আসনে জয়ী হয়। অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা ০.৮০ শতাংশ ভোট পেলেও কোনো আসনে জয়ী হতে পারেনি। সেবারই অল ইন্ডিয়া গোর্খা লীগ পায় ২টি আসন। এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন আরামবাগ কেন্দ্র থেকে জয়ী কংগ্রেসের প্রফুল্ল চন্দ্র সেন। আবারও বরানগর কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে বিরোধী দলনেতা হন জ্যোতি বসু। ১ জুলাই ১৯৬২ তে বিধান রায়ের মৃত্যু হলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন প্রফুল্ল চন্দ্র সেন।
১৯৬৭ সালে রাজ্যে আসন বেড়ে দাঁড়ায় ২৮০ তে। এর মাঝেই সিপিআই ভেঙে গেছে। জন্ম নিয়েছে সিপিআই(এম)। সেবারের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হয় ১২৭ আসনে। প্রাপ্ত ভোট ৪১.১৩ শতাংশ। ১৮.১১ শতাংশ ভোট পেয়ে সিপিআই(এম) জয়ী হয় ৪৩ আসনে। কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়া আসা বাংলা কংগ্রেস পায় ৩৪ আসন। সিপিআই ১৬, ফরওয়ার্ড ব্লক ১৩, প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টি ৭, আরএসপি ৭ আসনে জয়ী হয়। এসইউসি পায় ৪ আসন। জনসংঘ জয়ী হয় ১টি আসনে। নির্বাচন পরবর্তী সমঝোতায় মুখ্যমন্ত্রী হন বাংলা কংগ্রেসের অজয় মুখার্জি। যদিও মাত্র ৮ মাসের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করেন। দায়িত্ব নেন প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ।
যদিও ১৯৬৭ সালের জোট সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ১৯৬৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার পড়ে যায়। রাজ্যে জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। ১৯৬৯-এর নির্বাচনে ৫০ আসনে লড়াই করে একটিও আসনে জয়ী হয়নি ভারতীয় জনসংঘ। ২৮০ আসনে লড়াই করে কংগ্রেস জয়ী হয় ৫৫ আসনে। ভোট পায় ৪১.৩২ শতাংশ। ৯৭ আসনে লড়াই করে সিপিআই(এম) জয়ী হয় ৮০ আসনে। ৩৬ আসনে লড়াই করে সিপিআই যেতে ৩০ আসনে। ৪৯ আসনে লড়ে বাংলা কংগ্রেস যেতে ৩৩ আসনে। ফরোয়ার্ড ব্লক ২১ আসনে এবং আরএসপি ১২ আসনে। প্রজা সোস্যালিস্ট পার্টি পায় ৫ আসন। সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টি পায় ৫ আসন। এবারেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন অজয় মুখার্জি। (ক্রমশ)
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন