
নন্দীগ্রামে নির্বাচনের তিনদিন আগে শিশির অধিকারী-শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪ বছর আগে নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় শিশির অধিকারী-শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশেই 'হাওয়াই চটি' পরা পুলিশ ঢুকেছিল নন্দীগ্রামে, এমনই অভিযোগ করলেন তিনি।
গত ১০ মার্চ নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া বাজারে চোট পাওয়ায় পর গতকাল প্রথম নিজের নির্বাচনী এলাকায় আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেয়াপাড়ার শিবমন্দির মাঠে বসন্ত উৎসবে যোগ দেন তিনি। এদিন তাঁর সাথে ছিলেন রাজারহাট-গোপালপুরের তৃণমূল প্রার্থী তথা কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সি। প্রাথমিকভাবে সেখানে কোনো রাজনৈতিক বক্তৃতা না দেওয়ার কথা জানালেও কিছুক্ষণ পরে নাম না করে অধিকারী পরিবারকে তীব্র আক্রমণ করা শুরু করেন মমতা।
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "১৪ মার্চ যেদিন গুলি চলল, আপনাদের মনে আছে নিশ্চয় যারা গুলি চালিয়েছিল তাদের অনেকে হাওয়াই চটি এবং পুলিশের পোশাক পরে এসেছিল। হাওয়াই চটি পরে ছিল ধরা পড়ে গিয়েছিল। এই বাপ-ব্যাটার পারমিশান ছাড়া সেদিনকে পুলিশ নন্দীগ্রামে ঢুকতে পারত না। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। আমিও একটা গভর্নমেন্ট চালাই। আমি পরে খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি সব।" তাঁর আরও অভিযোগ, এবারের নির্বাচনেও অনেকের এরকম কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনেকেই বিএসএফ, সিআইএসএফ-এর পোশাক কিনে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
অধিকারী পরিবারকে আরো আক্রমণ করে তিনি বলেন, "আমার নিজের অনেক দোষ আছে। আমি নিজের দোষ স্বীকার করছি। অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের মতো অন্ধ ভালোবাসা। কেউ পিছন থেকে ছুরি মারতে পারে আমি বুঝতে পারিনি। এরা কেউ তৃণমূলের জন্মলগ্নে ছিল না। বাবাও ছিল না, ব্যাটাও ছিল না, জ্যাঠাও ছিল না, কাকাও ছিল না। ওঁরা শুরুতে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়েছিল। ১৯৯৮ সালে অখিল গিরি তৃণমূলের হয়ে লড়েছিল। তখন ওঁরা তিন নম্বরে ছিল। দলের জন্মসময়ে ছিলেন না ওঁরা।"
অন্যদিকে নন্দীগ্রামের সিপিআইএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে হেনস্থার প্রতিবাদে গতকাল দিনভর উত্তাল রইলো গোটা এলাকা। দফায় দফায় বামেদের বিক্ষোভ, অবরোধে উত্তাল হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম এলাকা। ঘটনার ২৪ ঘন্টার পরেও মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য আব্বাস বেগ সহ সমস্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রথমে নন্দীগ্রাম থানা ঘেরাও, পরে নন্দীগ্রাম থেকে টেঙ্গুয়াগামী সড়ক অবরোধ করেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। থানা ঘেরাওতে অংশ নেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিআই(এম) সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্যনেত্রী কনীনিকা বোস ঘোষ, প্রার্থী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ বহু সাধারণ মানুষ। প্রবল চাপের মুখে পড়ে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা আব্বাস বেগকে। রাত ১০টা নাগাদ নন্দীগ্রামের কুলতলাতে এক পথসভাতে একথা জানান বাম প্রার্থী মীনাক্ষী স্বয়ং।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন