৫০-এ পা রাখলেন ফুটবল বিশ্বের 'পারফেক্ট ম্যাজিশিয়ান' জিনেদিন জিদান

পেলে-মারাদোনার পর ফুটবল বিশ্ব যখন আর এক কিংবদন্তীর জন্য অপেক্ষা করেছিলো ঠিক তখনই ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভাব হয় এক 'পারফেক্ট ম্যাজিশিয়ানের' - জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান।
জিনেদিন জিদান
জিনেদিন জিদানফাইল ছবি

ফুটবল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা কোচ কিংবদন্তী স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন বলেছিলেন, "আমাকে একজন জিদান আর দশটা কাঠের টুকরো দিন। আমি আপনাদের চ্যাম্পিয়নস লীগ এনে দেবো।" ফুটবল বিশ্বে কিংবদন্তীর অভাব নেই। তবে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? মাথায় প্রথমে দুটোই নাম আসবে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে এবং আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী দিয়াগো মারাদোনা। দুজনের মধ্যে কে সেরা তা নিয়ে বিতর্ক লেগেই রয়েছে। পেলে-মারাদোনার পর ফুটবল বিশ্ব যখন আর এক কিংবদন্তীর জন্য অপেক্ষা করেছিলো ঠিক তখনই ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভাব হয় এক 'পারফেক্ট ম্যাজিশিয়ানের' - জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান। তাঁরই জাতীয় দলের সতীর্থ থিয়েরি অঁরি বলেছিলেন, "ফ্রান্সে সবাই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। আর তিনি মাঠে খেলেন। তিনি জিনেদিন জিদান।"

বিশ্বকাপ ফুটবলের জন্মদাতা ফ্রান্স। তবে টানা ১৫ টি আসর কেটে গেলেও বিশ্বকাপের স্বাদ পাচ্ছিলো না ফরাসীরা। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ১৯৯৮ সালে। আর এই জয়ের নেপথ্যে যার ভূমিকা অপরিসীম, তিনি আর কেউ নন, 'পারফেক্ট ম্যাজিশিয়ান' জিদান। ফুটবল প্রেমীদের প্রিয় জিজু। আজ জিদানের ৫০ তম জন্মদিন।

১৯৭২ সালের ২৩ শে জুন ফ্রান্সের মার্সেই শহরে জন্মগ্রহণ করেন জিদান। তিনি আসলে ছিলেন আলজিরিয়া বংশোদ্ভূত। জিদানের পরিবার আলজিরিয়া থেকে ফ্রান্স চলে আসে। তাঁরা ছিলেন অভিবাসী। প্রথমে জিদানের আলজিরিয়ার হয়ে ফুটবল খেলার কথা থাকলেও দলে নেওয়া হয়নি তাঁকে। তার কারণ জিদান নাকি যথেষ্ট গতিসম্পন্ন ছিলেন না।

ছোটো বেলা থেকেই ফুটবলই তাঁর প্রাণ। মাত্র ১০ বছর বয়সেই মার্সেইর ইউএস সেন্ট হেনরি ক্লাবের জুনিয়র দলের হয়ে তাঁর ফুটবল কেরিয়ার শুরু হয়। তারপর অনেকগুলো ক্লাবের হয়ে ফুটবল খেলার সুযোগ পান। ১৯৯৪ সালের ১৭ আগস্ট ফ্রান্সের হয়ে চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে অভিষেক ঘটে জিদানের। এরপর প্রায় দেড় দশক দেশের জার্সি গায়ে মাঝমাঠে রাজত্ব করেছেন তিনি। ১৯৯৮ ও ২০০৬ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। আর দু'বারই দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন জিদান। ৯৮ এর বিশ্বকাপে তাঁর দুটি হেডারের সুবাদে ব্রাজিলকে ৩-০ গোলে হারায় ফ্রান্স। ২০০০ সালে ফ্রান্সকে ইউরোপ সেরার মুকুট এনে দেওয়ার অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনিই। ইউরোতে টুর্নামেন্ট সেরা হন জিদানই।

১৯৯৬ সালে জিদান তিন মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফী'র মাধ্যমে যোগ দেন জুভেন্তাসে। ১৯৯৬-৯৭ ও ১৯৯৭-৯৮ পরপর দুই সিজনে সিরি এ জিতেন তিনি। ১৯৯৬-৯৭ সিজনে সিরি এ-এর সেরা বিদেশী খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে নেন জিদান। ২০০১ সালে ইতালি ছেড়ে স্পেনে আসেন তিনি। যোগ দেন রিয়েল মাদ্রিদে। স্প্যানিশ জায়ান্টদের হয়ে ৫ বছরে তিনি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন লীগ, লা লিগা সহ ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ ও উয়েফা সুপার কাপ জিতেছিলেন।

ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসে জিদান একটি যুগ। তাঁকে ছাড়া ফ্রান্সের ফুটবল অপূর্ণ। খেলোয়াড় হিসেবে তিনি অসংখ্য একক পুরস্কার পেয়েছেন, তন্মধ্যে রয়েছে ১৯৯৮, ২০০০, ও ২০০৩ সালে ফিফা বর্ষসেরা খেলোয়াড় এবং ১৯৯৮ সালে ব্যালন ডি’অর, ১৯৯৬ সালে তিনি বর্ষসেরা লিগ ওয়ান খেলোয়াড়, ২০০১ সালে বর্ষসেরা সিরি আ ফুটবলার, এবং ২০০২ সালে লা লিগা সেরা বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে ভোটে নির্বাচিত হন।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in