ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ কেন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়? এর পেছনে রয়েছে কোন ইতিহাস?

১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপে এই নিয়ম ছিল না। প্রথম জোরালো প্রতিবাদ আসে ১৯৭৮-এর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে।
আজকের ম্যাচ
আজকের ম্যাচছবি নিজস্ব

কাতার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের রাউন্ড-২ এর সবকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে তৃতীয় রাউন্ডের খেলা। আর এই তৃতীয় রাউন্ডের খেলায় সময়সূচীতে আসছে আমূল পরিবর্তন। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটে, সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা, রাত সাড়ে ন'টা এবং সাড়ে বারোটায় অনুষ্ঠিত হতো ম্যাচগুলি। কিন্তু তৃতীয় রাউন্ডে একই গ্রুপের দুটি করে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে একই সময়ে। শুধু কাতার বিশ্বকাপে নয়। বিশ্বকাপে এই নিয়ম চলে আসছে প্রায় চার দশক ধরে। কিন্তু কেনো? এর পেছনে রয়েছে ঠিক কি কারণ?

১৯৩০ সাল থেকে শুরু হওয়া ফুটবল বিশ্বকাপে এই নিয়ম ছিল না। প্রথম জোরালো প্রতিবাদ আসে ১৯৭৮-এর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে। আর্জেন্টিনায় আয়োজিত সেই বিশ্বকাপে আলবিসেলেস্তেদের সুবিধা করে দিতে তাদের খেলা ফেলা হয় সবার শেষে। সেজন্য পরের পর্বে ওঠার জন্য কী করতে হবে, সেটা আগে থেকেই জানতো তারা। শিরোপা জয়ের জন্য পেরুর বিরুদ্ধে ৪-০ ব্যবধানে জিততে হতো আর্জেন্টিনাকে। স্বাগতিকরা ওই ম্যাচ জিতে ৬-০ গোলে। প্রথম শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। তবে আর্জেন্টিনার এই শিরোপা জয় নিয়ে রয়েছে হাজার প্রশ্ন। আজকের প্রতিবেদনে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা বাদ দেওয়া যাক।

এবার আসা যাক ১৯৮২ সালের স্পেন বিশ্বকাপে। এই আসরেও ঘটে এক ঘটনা, যে কারণে ফিফা বাধ্য হয়েই গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ একই সময়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।

স্পেন বিশ্বকাপের একই গ্রুপে ছিল পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, আলজেরিয়া ও চিলি। এই বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটেছিল আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার। আর উদ্বোধনী দিনেই তারা পরাশক্তি পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দেয় ২-১ গোলে। আফ্রিকার কোনো দেশ হিসেবে ইউরোপের কোনো দেশকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে ইতিহাস গড়ে আলজেরিয়া। পরের ম্যাচে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে হারলেও, তৃতীয় ম্যাচে চিলিকে ৩-২ গোলে হারিয়ে ফের নজির গড়ে আফ্রিকার দেশ। প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে দুটি জয় পায় তারা।

গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে আলজেরিয়া নেমেছিল চিলির বিপক্ষে। আর অস্ট্রিয়া নামে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে। ম্যাচ দুটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে। অস্ট্রিয়া এবং জার্মানি মাঠে নামার আগেই জেনে যায় সমীকরণ। পশ্চিম জার্মানি যদি এক গোলের ব্যবধানে জেতে তাহলে তারা ও অস্ট্রিয়া চলে যাবে পরের পর্বে। আর যদি তিন গোলের বেশি ব্যবধানে জেতে তাহলে অস্ট্রিয়া বাদ পড়বে। আর তিন গোলে জিতলে অস্ট্রিয়া ও আলজেরিয়ার মধ্যে যে দল বেশি গোল করবে তারা যাবে পরের রাউন্ডে।

শেষ ম্যাচে ফেভারিট পশ্চিম জার্মানি জেতে ১-০ গোলে। খেলা শুরুর ১০ মিনিটেই গোল পেয়ে যায় জার্মানি। এরপর গোটা ম্যাচে জার্মানি আর গোল করার চেষ্টা করেনি। অস্ট্রিয়াও খেলার জন্য খেলে। তারাও গোল পরিশোধের চেষ্টা করেনি। কারণ তারা জানতো এই স্কোর লাইন থাকলে দুই দলই পৌঁছে যাবে পরের রাউন্ডে। এর ফলে কপাল পুড়ে আলজেরিয়ার। এই ম্যাচের পর তুমুল সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনার নাম দেওয়া হয় ''গিজনের কেলেংকারি''। আর পরের বিশ্বকাপ থেকেই ফিফা নিয়মে পরিবর্তন আনে। একই গ্রুপের শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় একই সময়ে।

GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in