রাজ্যে ১০ বছরে উধাও ৭ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়, 'ইচ্ছাকৃত', দাবি ABPTA-এর

সবথেকে বেশি বিদ্যালয় কমেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় - ১,১৯২ টি। এই জেলার ১৩টি ব্লক সুন্দরবন এলাকার মধ্যে পড়ে, যেখানে অত্যন্ত গরীব মানুষের বাস।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিসৌজন্যে - ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রাইমারি বোর্ডের ওয়েবসাইট

১০ বছরে উধাও হয়ে গেছে সাত হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়! সরকারী পরিসংখ্যানেই এমন তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় কমেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়, যেখানে ১৩ টি ব্লক সুন্দরবনের মধ্যে পড়ে।

সম্প্রতি মিড ডে মিল নিয়ে কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। সেখানেই এই আশঙ্কার বিষয়টি উঠে এসেছে। শিক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শেষ ১০ বছরে ৭,০১৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কমেছে রাজ্যে। ২০১২ সালে রাজ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৭৪,৭১৭ টি। ২০২২ সালের মার্চে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭,৬৯৯ তে।

সবথেকে বেশি বিদ্যালয় কমেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় - ১,১৯২ টি। এই জেলার ১৩টি ব্লক সুন্দরবন এলাকার মধ্যে পড়ে, যেখানে অত্যন্ত গরীব মানুষের বাস। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। ২০১২ সালে যখন এই জেলা বিভক্ত হয়ে ঝাড়গ্রাম সৃষ্টি হয়নি তখন এখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৮,৪০৪টি। এখন পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম দুটি পৃথক জেলা। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুরে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫,৪১১ এবং ঝাড়গ্রাম ১,৯৪৬। দুই জেলা মিলিয়ে মোট - ৭,৩৫৭। অর্থাৎ বিদ্যালয় কমেছে ১,০৪৭টি। যেখানে নতুন জেলা তৈরি হলে বিদ্যালয় সংখ্যা বাড়ার কথা।

পূর্ব মেদিনীপুরে শেষ ১০ বছরে বিদ্যালয় কমেছে ৮৬৭টি। ২০১২ সালে ছিল ৫,৬১৯টি। ২০২২ সালে হয়েছে ৪,৭৫২।

পুরুলিয়া ছাড়া সমস্ত জেলাতেই গত ১০ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমেছে। তবে পুরুলিয়াতেও দশ বছরে মাত্র ১টি বিদ্যালয় বেড়েছে। ২০১২ সালে এখানে মোট বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল ৩,৪৯০টি, ২০২২ সালে তা হয়েছে ৩,৪৯১টি। এছাড়াও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এলাকাতে ৮৩ টি বিদ্যালয় বেড়েছে বলে দাবি সরকারের।

কিন্তু এত স্কুল বন্ধ হয়ে গেলো? বন্ধ হয়ে যাওয়া এরকম এক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের (প্রাক্তন) কথায়, আমাদের স্কুলের কোনো স্থায়ী বাড়ি ছিল না। স্থানীয় এক মন্দিরে স্কুল হতো। একসময় মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু হলো। তখন স্কুল একটি বাড়িতে হতো। এরপর ধীরে ধীরে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে। তারপর স্কুল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্কুল বাড়ি না থাকার পাশাপাশি শিক্ষক না থাকা, ছাত্র-ছাত্রী না থাকা স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

ABPTA-এর রাজ্য সম্পাদক মোহন দাস পণ্ডিত পিপলস রিপোর্টারের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, "রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ভুল নীতির জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজ এই বেহাল অবস্থা। স্কুলে পরিকাঠামো নেই। বিষয়ভিত্তিক বই নেই। ছাত্রছাত্রীদের ভার লাঘবের নামে বিষয়ভিত্তিক বই তুলে দিয়ে এক জায়গায় সব বিষয় ঢুকিয়ে একটাই বই করে দেওয়া হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য। অধিকাংশ স্কুলে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ঠিক নেই। যাঁদের মেধা নেই বেআইনিভাবে তাঁরা শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। নানা অজুহাতে বারবার স্কুল বন্ধ দিয়ে দিচ্ছে সরকার। এই সমস্ত কারণের জন্য অভিভাবকদের একটা বড় অংশ সরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট। যাদের একটু পয়সা আছে তাঁরা মনে করেন সরকারি বিদ্যালয়ে পড়িয়ে লাভ নেই।"

এই প্রসঙ্গে এবিপিটিএ রাজ্য সভাপতি দেবাশীষ দত্ত বলেন, "রাজ্য সরকার আসলে এর মাধ্যমে কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতিকে বাস্তবায়িত করতে চাইছে। প্রাথমিক স্কুলগুলি বর্তমান রাজ্য সরকার একেবারেই তুলে দিতে চাইছে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলগুলি পরিচালনা করার জন্য বামফ্রন্ট সরকার ভিলেজ এডুকেশন কমিটি নামক একটি কমিটি তৈরি করেছিল। গ্রামের লেখাপড়া জানা ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি তৈরি করা হতো। এখন সেই কমিটির কোনো অস্তিত্ব নেই। শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্য বা কাউন্সিলর স্কুল পরিচালনা করে। প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা নিয়ে একাধিকবার সরকারের দ্বারস্থ হয়েছি আমরা, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।"

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in