রেণু খাতুন ছোট বিন্দু মাত্র, রাজ্যে গত ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে রোজগেরে মহিলার সংখ্যা

স্বামী শেখ মহম্মদের আশঙ্কা, স্ত্রী রেণু খাতুন চাকরি করতে শুরু করলে তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে, কারণ তিনি বেকার। শুধুমাত্র এই আশঙ্কা-আতঙ্ক থেকেই স্ত্রীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে তাঁর হাত কেটে নেন তিনি।
হাসপাতালের বেডে রেণু খাতুন
হাসপাতালের বেডে রেণু খাতুনছবি সংগৃহীত

স্ত্রী-কে সরকারী চাকরি করতে দেবে না, তাই স্ত্রীর ডানহাতই কেটে নিলেন স্বামী। নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রমে। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মূল অভিযুক্ত স্বামী শেখ মহম্মদ এখনও পলাতক।

সম্প্রতি কেতুগ্রামের কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা রেণু খাতুন সরকারী নার্সের চাকরি পেয়েছিলেন। তাঁর স্বামী শেখ মহম্মদের আশঙ্কা, স্ত্রী চাকরি করতে শুরু করলে তাঁকে ছেড়ে চলে যাবে, কারণ তিনি বেকার। শুধুমাত্র এই আশঙ্কা-আতঙ্ক থেকেই স্ত্রীর উপর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে তাঁর হাত কেটে নেন তিনি। এই মুহূর্তে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রেণু। তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন শেখ মহম্মদ ও তাঁর বাবা মা। সোমবার সকালে বাবা ও মা কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রেণু খাতুন একটা ছোট বিন্দু মাত্র। এ রাজ্যের চতুর্দিকে এরকম হাজার হাজার রেণু খাতুন ছড়িয়ে আছেন, যাঁদের প্রতিনিয়ত বাড়ির পুরুষ মানুষটির খবরদারির অধীনে থাকতে হয়। এমনকি কোনো মহিলা চাকরি করবেন কি করবেন না সেই বিষয়েও চূড়ান্ত মতামত দেবেন বাড়ির পুরুষ মানুষ। রিপোর্ট বলছে গত ১৪-১৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।

এক্ষেত্রে উদাহরণ স্বরূপ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দুটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। একটি - ২০০৭ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২ এবং চলতি বছরের মার্চে প্রকাশিত ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ৫-এর রিপোর্ট। এই রিপোর্ট অনুযায়ী উপার্জনশীল বিবাহিত মহিলার হার কমেছে পশ্চিমবঙ্গে। ২০০৭ সালে রাজ্যে উপার্জনশীল মহিলা ছিলেন ৩০.১ শতাংশ। ২০১৬-তে তা কমে দাঁড়ায় ২২.৮ শতাংশে। ২০২২ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২০.৮ শতাংশে।

দেশের প্রেক্ষিতেও এই হার কমেছে। ২০০৭ সালে দেশে বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে উপার্জনশীল ছিলেন ৪৩ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে হয়েছে ৩১.৯ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে এই হার বর্তমানে ৯৮ শতাংশ।

পশ্চিমবঙ্গে রোজগেরে মহিলার সংখ্যা কমার পেছনে বিশেষজ্ঞরা যে কারণগুলি উল্লেখ করছেন সেগুলি হলো - আগে MGNREGA প্রকল্পে মহিলারা কাজ করতেন। কিন্তু পুরুষদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ায় তাঁরা এই কাজে যোগ দিচ্ছেন, যার খেসারত দিতে হচ্ছে মহিলাদের। এছাড়া গত ১১ বছরে অনেকটাই কমেছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ, যা মহিলাদের উপার্জনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পথ ছিল। এর উপর বাড়ির পুরুষদের খবরদারি তো রয়েইছেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে এই খবরদারির চেহারা ক্রমশ বাড়ছে।

শুধু উপার্জনশীল মহিলার সংখ্যাই নয়, নিজের উপার্জন করা টাকা কোন খাতে ব্যয় হবে, সেই বিষয়ে মতামত দেওয়ার প্রবণতাও কমেছে মহিলাদের মধ্যে। ২০০৭ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, উপার্জনকারী মহিলার টাকা কোন খাতে ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক করতেন ওই মহিলাদের মধ্যে ১৪.৬ শতাংশের স্বামীরা। ২০২২ সালে সেই হার বেড়ে হয়েছে ১৬.৭ শতাংশ।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in