খুনিরা ২০ রাউন্ড গুলি চালালেও পুলিশ একটিও ছোড়েনি কেন? আতিক হত্যায় বহু প্রশ্নের মুখে যোগীর পুলিশ

দুটি তুর্কি পিস্তলের এক একটির দাম কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। ভারতে নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় হামলাকারীরা কীভাবে এত দামি পিস্তল জোগাড় করলো? যেখানে হামলাকারী তিনজনই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।
আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ(বামদিকে)
আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ(বামদিকে)ফাইল ছবি
Published on

জাল প্রেস আই কার্ড, একটি ডামি ক্যামেরা এবং একটি মাইক, এবং দুটি নিষিদ্ধ তুর্কি পিস্তল এবং একটি দেশীয় পিস্তল - শনিবার প্রয়াগরাজে গ্যাংস্টার-রাজনীতিবিদ আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফের হত্যাকাণ্ড বলিউড সিনেমাকেও হার মানাবে।

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আতিক এবং তার ভাইকে টিভি ক্যামেরার সামনেই পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে হত্যা করে ৩ আততায়ী। প্রাক্তন সাংসদ আতিকের শরীর থেকে ৯ টি বুলেট পাওয়া গেছে। ৫ টি বুলেট পাওয়া গেছে তাঁর ভাইয়ের শরীর থেকে। কিন্তু পুলিশের সামনে হওয়া এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে।

যে যে প্রশ্নগুলি উঠছে:

১) লুভলেশ তিওয়ারি, মোহিত সিং এবং অরুণ মৌর্য নামের ওই তিন আততায়ী নিষিদ্ধ তুর্কি গিরসান ও  জিগানা ৯ মিমি পিস্তল এবং একটি দেশীয় পিস্তল ব্যবহার করেছিল। দুটি তুর্কি পিস্তলের এক একটির দাম কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। ভারতে নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় হামলাকারীরা কীভাবে এত দামি পিস্তল জোগাড় করলো? যেখানে হামলাকারী তিনজনই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। পিস্তলগুলি কি পাচার করা হয়েছে? তাহলে কি এই হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড অন্য কেউ? উত্তরপ্রদেশের দুই প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (ডিজিপি) বিক্রম সিং এবং বিভূতি নারাইন রাই এই প্রশ্ন তুলেছেন।

২) প্রশ্ন উঠছে মেডিকেল পরীক্ষার সময় নিয়ে। কেন রাত ১০ টার পর চেক-আপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? কলভিন হাসপাতালের চিফ মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ নাহিদা সিদ্দিকী সংবাদমাধ্যমে বলেন, আতিক এবং তার ভাইকে চেক-আপের জন্য আনা হচ্ছে, পুলিশ এই বিষয়ে আগে থেকে আমাদের কিছুই জানায়নি। ওদের হাসপাতালে পৌঁছানোর মাত্র ১০ মিনিট আগে আমাদের এই বিষয়ে ফোন করা হয়।“ আতিকের আইনজীবী বিজয় মিশ্র প্রশ্ন তুলেছেন, আতিক অথবা তার ভাই - দুজনের কারও হঠাৎ কোনও শারীরিক অস্বস্তি হয়নি, তাহলে এত রাতে চেক আপ কেন?

৩) বন্দুকধারীরা ২০ রাউন্ড গুলি চালালেও পুলিশ একটি গুলিও ছোড়েনি। হাতকড়া পরা আতিক ও আশরাফ মাথায় আঘাত পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ভিজ্যুয়ালে দেখা যাচ্ছে বন্দুকধারীরা তারপরও তাদের উপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও পুলিশ একটিও গুলি চালায়নি। কেন?

৪) দুজন হাই-প্রোফাইল বন্দীদের কাছে যাওয়ার আগে কেন সাংবাদিকদের তল্লাশি করা হয়নি? আততায়ীরা এতটাই কাছে ছিল যে প্রথম গুলিটি পয়েন্ট-ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে হেডশট ছিল। এই গুলিতে আতিকের পাগড়ি উড়ে যায় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

৫) আতিক ও আশরাফকে নিয়ে প্রায় ২০ পুলিশের একটি দল হাসপাতালে গিয়েছিল। তিন শ্যুটার থেকে তারা বন্দীদের রক্ষা করতে পারলো না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী খুনিরা আতিককে অন্তত নয় বার গুলি করেছে এবং আশরাফকে পাঁচটি। এরপর তাদের ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। কেন এত দেরি?

৬) দু’জন ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টারকে নিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন পুলিশ তাদের গাড়িটিকে হাসপাতালের গেটের বাইরে পার্ক করিয়েছিল? কেন সেখান থেকে দুজন হেঁটে গিয়েছিল? মিডিয়ার চাপ কমাতে পুলিশের উচিত ছিল হাসপাতালের একেবারে সামনে গাড়ি পার্ক করানো।

আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ(বামদিকে)
লক্ষ্য ছিল গ্যাংস্টার হওয়া! পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া সানি আজ আতিক খুনের অন্যতম অপরাধী

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in