বাম সাংসদ গীতা মুখার্জি - ২৭ বছর আগেই মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে ব্যক্তিগত চেষ্টায় সংসদে বিল পেশ করেন

People's Reporter: নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আন্তরিক ছিলেন তিনি। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, সংসদীয় ও আইনসভায় মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ না থাকলে সেই ক্ষমতায়ন বাস্তবায়িত হবে না।
গীতা মুখার্জি
গীতা মুখার্জি ছবি সংগৃহীত

বুধবার ৪৫৪ ভোটে লোকসভায় পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। বিল পেশের আগে লোকসভায় বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে দীর্ঘ বাদানুবাদ হয়েছে এই বিলের কৃতিত্ব কার তা নিয়ে। দুই দলই নিজেদেরকে এই বিলের প্রবক্তা বলে দাবি করেছে। কিন্তু জানেন কী? সাতাশ বছর আগে এক মহিলা সাংসদ ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংসদে প্রথম লোকসভা-বিধানসভায় এক-তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের পক্ষে বিল পেশ করেছিলেন। তিনি প্রয়াত সিপিআই নেত্রী গীতা মুখার্জি – পাঁশকুড়া লোকসভার (যা বর্তমানে বিলুপ্ত) সাতবারের নির্বাচিত সাংসদ।

১৯৯৬ সালে এইচ ডি দেবগৌড়া সরকারের সময় সংসদ ও বিধানসভায় ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে প্রথম সাংসদ হিসেবে প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করেছিলেন গীতা মুখার্জি। ১৯৯৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এই বিল সংসদ হাউসে পেশ করেন তিনি। এর ঠিক ২৭ বছর পর সেই সেপ্টেম্বর মাসেরই ২০ তারিখে নারী শক্তি বন্দনা অধিনিয়ম নামে লোকসভায় পাশ হল মহিলা সংরক্ষণ বিল, যে বিলের নিয়ম অনুযায়ী, ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হবে। তবে তার আগে জনগণনা করে আসন পুর্নবিন্যাস করা হবে।

গীতা মুখার্জির আবেদন মেনে মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদীয় যৌথ কমিটির কাছে পাঠানো হয় বিলটি। কমিটির চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হন গীতা মুখোপাধ্যায়। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই যৌথ কমিটির সদস্য ছিলেন। এই কমিটি মহিলা সংরক্ষণ নিয়ে মূলত সাতটি সুপারিশ করেছিল। ওবিসি মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের সুপারিশও করেছিল কমিটি। মনমোহন সিং সরকারের আমলে এই ওবিসি-সংরক্ষণ বাদে বাকি সুপারিশগুলি গ্রহণ করা হয়েছিল। ২০১০ সালে রাজ্যসভায় এই বিল পাসও হয়েছিল। কিন্তু লোকসভায় এই বিল পাস হতে সময় লাগল আরও ১৩ বছর। যদিও তার অনেক আগেই ২০০০ সালের ৪ মার্চ হঠাৎই মৃত্যু হয় বাম নেত্রী গীতা মুখার্জির।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দ্রজিৎ গুপ্তের ছোট বোন এবং কিংবদন্তী ভারতীয় কমিউনিস্ট নেতা প্রয়াত বিশ্বনাথ মুখার্জির স্ত্রী ছিলেন গীতা মুখার্জি। তাঁর দলের কমরেড এবং তৎকালীন মিডিয়া কর্মীদের মধ্যে 'গীতা-দি' নামে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন অত্যন্ত স্বল্পভাষী এই মহিলা। ১৯৮০ সালে প্রথম পাঁশকুড়া লোকসভায় নির্বাচিত হন তিনি। শেষবার নির্বাচিত হন ১৯৯৯ সালে। কিন্তু একবছর পরই আচমকা প্রয়াত হওয়ায় নিজের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি তিনি।

তাঁর ঘনিষ্ঠরা তাঁকে স্মরণ করার সময় জানিয়েছেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কতটা আন্তরিক ছিলেন তিনি এবং তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, সংসদীয় ও আইনসভায় মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ না থাকলে সেই ক্ষমতায়ন বাস্তবায়িত হবে না। শোনা যায়, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন বলে ইন্দ্রকুমার গুজরাল (১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস পর্যন্ত ভারতের দ্বাদশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) সরকারে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন গীতা।

উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়া সত্বেও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি। জীবনের শেষ অবধি হাওড়া থেকে নয়াদিল্লি যাওয়ার সময় সাধারণ থ্রি-টায়ার স্লিপার ক্লাসে যাতায়াত করতেন। পাঁশকুড়ার একাধিক বাম পরিবারে এখনও ওনার ছবি সযত্নে রাখা হয়েছে। এখনও পরম শ্রদ্ধায় তাঁকে স্মরণ করা হয়।

বুধবার বিল পাস নিয়ে বিতর্কের সময় তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে গীতা মুখার্জির নাম একবার হলেও স্মরণ করেছেন। কিন্তু কংগ্রেস নেত্রী সনিয়া গান্ধী একবারও গীতা মুখার্জির নাম উল্লেখ করেননি, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

-With IANS Inputs

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in