'বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে', পথকুকুর নিয়ে তীব্র বিতর্কের আবহে জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি

People's Reporter: বুধবার পথকুকুর সম্পর্কিত একটা জরুরী তালিকা সংযোজনের জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটি তোলা হয়েছিল। সেখানেই এমন মন্তব্য করেছেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি
Published on

দিল্লির লোকালয় থেকে অবিলম্বে সমস্ত পথকুকুর সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এরপর থেকে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা থেকে অভিনেতা, পশুপ্রেমি থেকে সমাজকর্মী— সরব হয়েছেন সকলেই। এই আবহে বুধবার প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই আশ্বাস দেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন।

বুধবার পথকুকুর সম্পর্কিত একটি জরুরী তালিকা সংযোজনের জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটি তোলা হয়েছিল। সেখানেই এমন মন্তব্য করেছেন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি। ‘লাইভ ল’-এর প্রতিবেদন সূত্রে খবর, ২০২৪ সালে কনফারেন্স ফর হিউম্যান রাইট্‌স (ইন্ডিয়া) নামে এক স্বচ্ছেসেবী সংগঠন পথকুকুরদের নির্বীজকরণ এবং টিকাকরণের বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলায় দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।

বুধবার সেই মামলার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপিত হলেই প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ে মন্তব্য, "অন্য একটি বেঞ্চ তো ইতিমধ্যেই পথকুকুর সংক্রান্ত একটি নির্দেশ জারি করেছে"। মূলত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ যে নির্দেশ জারি করেছে, এদিন সেই কথাই উল্লেখ করেছেন প্রধান বিচাপতি। এরপরেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি।

এদিন, ২০২৪ সালে মে মাসে বিচারপতি জেকে মহেশ্বরীর বেঞ্চের একটি নির্দেশও আদালতে পড়ে শোনান আইনজীবী। সেই নির্দেশ অনুযায়ী, "কর্তৃপক্ষকে আইন মেনে পদক্ষেপ করতে হবে। তবে কোনও রকম পরিস্থিতিতেই পথকুকুরদের নির্বিচারে হত্যা করা যাবে না। সকল জীবের প্রতি করুণা প্রদর্শন করাই সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। সকলকে তা মানতে হবে। এতে কোনও দ্বিমত নেই"।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে দিল্লি হাইকোর্টে পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও টিকাকরণ করানোর ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যদিও ২০২৩ সালে কোনও নির্দেশ ছাড়াই মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু মামলাটি শুনানির জন্য এখনও পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়নি।

প্রসঙ্গত, দিল্লি পুরসভার দেওয়া সরকারি তথ্য অনুসারে, চলতি জানুযায়ী থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ৪৯টি জলাতঙ্কে আক্রন্ত হওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যা নিয়ে দিল্লি সরকার, দিল্লি পুরসভা এবং নয়াদিল্লি পুরসভার সঙ্গে বৈঠকও করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপর সোমবার শীর্ষ আদালত জানায়, অবিলম্বে পথকুকুরদের লোকালয় থেকে সরিয়ে তাদের জীবাণুমক্ত করিয়ে কোনও আশ্রয়কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এরপর মঙ্গলবার আরও একটা নির্দেশিকা জারি করে শীর্ষ আদালত। যেখানো জানানো হয়, এবার থেকে উচ্ছিষ্ট খাবার খোলা জায়গায় নয়, ঢাকা দেওয়া ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। কারণ এর ফলে পথকুকুররা খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আবর্জনার স্তূপে ঘাঁটাঘাঁটি করে। যেটা অস্বাস্থ্যকর! আবার কখনও কখনও তারা পথচারীদের কামড়ে বা আঁচড়ে দেয়। তাই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ।

যদিও সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বিতর্ক শুরু হয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, "মানবিকতার পথ থেকে সরে এসে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। অবলা প্রাণীদের এ ভাবে সমস্যা বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না"।

এই ঘটনায় সরব হয়েছে ‘পেটা’ (পিপল ফর এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অফ অ্যানিম্যাল্‌স)-ও। তাদের দাবি, এত বড় জায়গা জুড়ে স্থানচ্যুতি অবৈজ্ঞানিক এবং অকার্যকর। এরফলে কুকুরদের সংখ্যা বাড়বে। এমনকি রোধ করা যাবে না জলাতঙ্ক কিংবা কুকুর কামড়ের ঘটনা। সকলেরই দাবি, নির্বীজকরণ, টিকাদান এবং যথাযথ যত্নের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

প্রতীকী ছবি
Delhi: দিল্লির লোকালয় থেকে সব পথকুকুরদের সরিয়ে ফেলার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in