করোনা মহামারী মোকাবিলাই এখন মোদি সরকারের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ

অক্সিজেন সংকট, ভ্যাকসিন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ভুগছে মানুষ। তার ওপর ক্রমাগত বাড়ছে জ্বালানির দাম। সবমিলিয়ে ক্ষোভে ফু্ঁসছে দেশের মানুষ। যা সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকারের কাছে।
করোনা টিকাকরণ শুরুর আগে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
করোনা টিকাকরণ শুরুর আগে ভিডিও কনফারেন্সিং-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীছবি সৌজন্য - পি আই বি

করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ে কার্যত বেসামাল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। ব্যাপক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ে দেশে লাখো মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। অক্সিজেন সংকট, ভ্যাকসিন, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে ভুগছে মানুষ। তারওপর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে জ্বালানির দাম। সবমিলিয়ে ক্ষোভে ফু্ঁসছে দেশের মানুষ। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও একাধিক জায়গা থেকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ল্যানসেট জার্নালের সম্পাদকীয়তেও। যা সামাল দেওয়া একপ্রকার চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মোদি সরকারের কাছে।

২০১৪ সালে সরকারে আসার পর মোদি সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত সর্ববৃহৎ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশের করোনা পরিস্থিতি। ২০১৫ সালে জমি অধিগ্রহণ বিল পাশ হওয়ার পর মোদি সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষের সৃষ্টি হয়েছিল। যা পরে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরিবর্তে গত বছর সংশোধিত কৃষি আইন নিয়ে আসা হয়। যার প্রতিবাদ এখনও চলছে। প্রতিবাদ স্বরূপ শরিক শিরোমণি অকালি দল এনডিএ ছেড়েছে। যার প্রভাব পাঞ্জাবের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিশেষ করে তিন কৃষি আইনের জেরে মোদী সরকারের ভাবমূর্তি যেভাবে নষ্ট হয়েছে তার প্রভাব আগামী উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও পড়তে বাধ্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর আগের চ্যালেঞ্জগুলোর থেকে কোভিড চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। বিজেপি সরকার এখন ক্ষমতায় আছে, তাই কাউকে দোষ দিতে পারছে না। মোদির ভালো সরকার চালানোর ভাবমূর্তি কোভিড-১৯ এর অব্যবস্থা একেবারে ভেঙেচুরে দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এই চ্যালেঞ্জকে সামলানো বিজেপির কাছে একটা বড় ধাক্কা। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে কেরালায় শূন্য হয়ে যাওয়া, তামিলনাড়ুতে হতাশাজনক ফলাফলের পেছনেও কোভিড অব্যবস্থা কিছু অংশে দায়ী। যদিও অন্যান্য কিছুর পাশাপাশি কোভিডের কারণে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির হার হয়েছে, এমনটাও বলা যায় না। উত্তরপ্রদেশের পঞ্চায়েত নির্বাচন, কর্ণাটকের পুর নির্বাচনে বিজেপির পিছিয়ে পড়ার পেছনেও কোভিড অব্যবস্থার কারণে মোদী সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া বড়ো কারণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

আদালত থেকে সাধারণ মানুষ, প্রায় সমস্ত বিরোধী দল কোভিড নিয়ে যেভাবে একযোগে কেন্দ্রকে আক্রমণ চালিয়েছে এবং প্রতিদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে, তাতে ৫৩৬ জন সাংসদের মধ্যে ৩০০ জন সাংসদের ভাগ্য এখন সুতোর ওপর ঝুলছে। দেশের এই বিপর্যয়ের সময় সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া নিয়ে যেভাবে বিরোধীরা আক্রমণের ঝাঁজ বাড়াচ্ছেন তাও আগামীদিনে বড়ো আকার নিতে পারে।

যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে প্রত্যেক দলীয় প্রতিনিধির কাছে ক্রমাগত বেড, জীবনদায়ী ওষুধ বা অক্সিজেনের আবেদন এসেই চলেছেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই দাবি মতো কোনও ব্যবস্থাই করতে পারেনি এইসব জন প্রতিনিধিরা। উত্তরপ্রদেশে কোনো অক্সিজেন সংকট নেই বলে বিজেপি সরকার দাবি করলেও সেখানে বিজেপি সাংসদ, বিধায়কদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে খোদ যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিজের সংসদীয় কেন্দ্র বারাণসীতেও কোভিড অব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মনে বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in