গত কয়েকদিন যাবত যারাই দাবী তুলছে, যারাই সংঘবদ্ধ ভাবে বলছে জাত নয় ভাত চাই, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন তাঁদের বিরুদ্ধেই এই হামলা পরিকল্পিতভাবে নামিয়ে আনা হচ্ছে। মিছিলে ব্লিচিং মেশানো জল ব্যবহার করা হয়েছে। এক্সপায়ারি ডেটের টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে, বেধড়ক লাঠিচার্জ করা হয়েছে কোনো প্ররোচনা ছাড়াই। এরপর মৌলালীতে যখন অবরোধ হয়েছে সেখানেও বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাম ছাত্র যুবদের নবান্ন অভিযানে ব্যাপক পুলিসি লাঠিচার্জের অভিযোগ তুলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।
এদিনের বাম ছাত্র যুবদের অভিযান সম্পর্কে বলতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, কাল রাত জুড়ে ড্রিল করে এস এন ব্যানার্জি রোডে ব্যারিকেড গেঁথে দেওয়া হয়েছে। দু’পাশে যতগুলো গলিপথ রাস্তা আছে সব রাস্তায় রাতভোর ব্যারিকেড করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সামনে, পাশে কোথাও যেতে দেবেনা। পুরো জালিয়ানওয়ালাবাগের মত চারদিক ঘিরে ফেলা হয়েছিলো। নবান্নর এত ভয়? ইচ্ছে করে পরিকল্পিতভাবে নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছে। অসংখ্য ছেলেমেয়ে আহত হয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুও আহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বামেদের দূরবীন দিয়ে দেখা যায়না। আজ ড্রোন ব্যবহার করতে হয়েছে এই মিছিল দেখার জন্য। যে সমস্ত অফিসার আমাদের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের গায়ে হাত তোলার ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁদের কাউকে ছাড়া হবেনা। এর প্রতিবাদে আগামীকাল এ রাজ্যের মানুষ রাজ্যকে স্তব্ধ করবে। এটা জেনে বুঝে রাজ্য সরকার ঘটিয়েছে। এর দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। সব আহতকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, সংবিধান আমাদের প্রতিবাদ করার অধিকার দিয়েছে। এঁরা বেকারদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ধোঁকা দিয়েছে। এই সরকারের কাছে যতবার স্মারকলিপি দিতে যাওয়া হয়েছে সরকার পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছে। মমতা ব্যানার্জি নাটক করছেন। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলেমেয়েদের হয়ে এঁরা কথা বলতে গেছিলো। নবান্নে যারা স্মারকলিপি দিতে গেছিলো নির্বাচিত এমএলএ-র সঙ্গে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজ্যে অমিত শাহর সফর প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন - মানুষ যখন পথে নামছে দুই সরকারের বিরুদ্ধে তখন ওঁরা রথে চড়ছেন। রাজ্যের মানুষ ওদের রথ থেকে নামাতে চাইছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন বোমাবাজির রাজত্ব বন্ধ করবো। বিজেপি তৃণমূলের দ্বিতীয় সংস্করণ ছাড়া কিছু নয়। তোলাবাজ তৃণমূলের নতুন সংস্করণ। চিটফান্ড দুর্নীতির দ্বিতীয় সংস্করণ। ত্রিপুরায় এইভাবে মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন। মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় বিজেপির দেখানো পথে সিঙ্ঘু বর্ডার নিয়ে আসতে চেয়েছেন। উনি ভুল করেছেন। উনি যৌবনের ঢলকে থামাতে পারবেন না।
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন - আজ যারা আহত হয়েছে, রক্তক্ষয় হয়েছে তা বৃথা যাবে না। প্রতি গ্রামে শহরে মহল্লায় এই বার্তা যাবে যে এই সরকার চাকরি দিতে পারে না। চাকরির দাবীতে মিছিল করলে তাঁদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দেয়। প্রতিবাদী মানুষের কন্ঠস্বর স্তব্ধ করলে, নতুন প্রজন্মের উড়ান আটকাতে চাইলে তার বিরুদ্ধে সংহতি জানিয়ে প্রতিবাদে শামিল হতে হয়। তা না হলে নিজেদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। তাই সব গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে আমি আগামীকাল প্রতিবাদে শামিল হতে আহ্বান জানাই।
তিনি আরও বলেন - বিজেপির এবং তৃণমূলের রাজনীতিতে কে এখন কার সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। যে বিকাশ বেকার ছেলেমেয়েদের কাজ দেয়না, কৃষকদের মাঠ ভুলিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেয় সেই বিকাশ আমরা চাইনা। উনি তো আগে গুজরাট মডেলের কথা বলতেন। এখন কেন বলেন না? অমিত শাহর কাছে বিকাশ মানে স্বজন পোষণ। উনি এখানে এসে বলছেন ভাইপোকে মুখ্যমন্ত্রী হতে দেব না। উনি নিজে কী করেন?
বিজেপি তৃণমূল আঁতাত প্রসঙ্গে এদিন সেলিম বলেন - অনুপ্রবেশকারী কারা? ধর্মের নামে হবে? ভাষার নামে হবে? উনি তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গোরু পাচার, স্মাগলিং আটকানোর দায়িত্ব কার? প্রতিদিন বিজেপিতে তো তৃণমূলের অনুপ্রবেশ হচ্ছে। সেটা আগে উনি আটকান। তৃণমূলের যত তোলাবাজ, গুন্ডা, সন্ত্রাসী – তারা অনুপ্রবেশ করছে না বিজেপিতে?
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।