Pandora Papers: ৯১ দেশের ৩৩০-এর বেশি রাজনীতিবিদের অবৈধ আর্থিক লেনদেনের নথি ফাঁস

ফাঁস হওয়া নথি থেকে দেখা যাচ্ছে হোমরা চোমরা, যাঁদের বিদেশে বেআইনি অর্থ লেনদেন বন্ধ করার কথা, উল্টে তাঁরাই এর সুবিধা নিয়েছেন। বেনামী কোম্পানি ও ট্রাস্টে সম্পত্তি জমিয়েছেন।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী গ্রাফিক্স সুমিত্রা নন্দন

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) জানিয়েছে কয়েক লক্ষ ফাঁস হওয়া নথি থেকে ৩৫জন বর্তমান ও প্রাক্তন বিশ্বনেতা, ৩৩০এর বেশি রাজনীতিবিদ এবং ৯১টি দেশ এবং অঞ্চলের সরকারি আধিকারিক এবং বিশ্বের একাধিক অপরাধী, খুনীর গোপন আর্থিক লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে।

গোপন নথি থেকে জর্ডনের রাজা, ইউক্রেন, কেনিয়া এবং ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের বিদেশে আর্থিক লেনদেনের হদিশ পাওয়া গেছে।

নথিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের 'অসরকারি প্রচার মন্ত্রী' এবং রাশিয়া, আমেরিকা, তুরস্ক এবং অন্য দেশের ১৩০এর বেশি বিলিওনেয়ারের আর্থিক কার্যকলাপের বিস্তারিত বিবরণ মিলেছে।

ফাঁস হওয়া নথি থেকে দেখা যাচ্ছে হোমরা চোমরা, যাঁদের বিদেশে বেআইনি অর্থ লেনদেন বন্ধ করার কথা, উল্টে তাঁরাই এর সুবিধা নিয়েছেন। বেনামী কোম্পানি ও ট্রাস্টে সম্পত্তি জমিয়েছেন। তাঁদের সরকারও আন্তর্জাতিক অবৈধ লেনদেনের মোকাবিলায় যথেষ্ট সচেষ্ট হননি। ওই অর্থেই ফুলেফেঁপে উঠেছে অপরাধী ও প্রতারকরা।

নথিতে যে সমস্ত সম্পত্তির হদিশ পাওয়া গেছে:

ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায় বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে কেনা চেক প্রজাতন্ত্রের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর একটি বিলাসবহুল ২২মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রাসাদ। তাতে একটি প্রেক্ষাগৃহ এবং দুটি সুইমিং পুল আছে। কোটিপতি ওই প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশিষ্টদের দুর্নীতি নিয়ে সরব ছিলেন।

গুয়াতেমালার এক অতি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যের আমেরিকার গ্রেট প্লেইনে গোপন ট্রাস্টে রাখা ১৩মিলিয়নের বেশি ডলার। ওই পরিবারের একটি সাবান ও লিপস্টিকের কারখানা আছে। তার বিরুদ্ধেও আবার শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানি ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ আছে।

মালিবুতে সমুদ্রমুখী তিনটি প্রাসাদ আছে জর্ডনের রাজার। তিনটি বিদেশি কোম্পানি থেকে ৬৮মিলিয়ন ডলারে এগুলি কেনা হয়েছিল তিনটি বিদেশি কোম্পানি থেকে। আরব বসন্তের সময়ে যখন জর্ডনবাসীরা পথে নেমেছিলেন বেকারি ও দুর্নীতির প্রতিবাদে, সে সময় ওই প্রাসাদগুলি কেনা হয়।

গোপন এই নথিকে বলা হচ্ছে প্যান্ডোরা পেপারস। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস পেয়েছে এই ধরনের ১১.৯ মিলিয়নের বেশি গোপন ফাইল। ১৫০টি সংবাদ সংস্থার ৬০০র বেশি সাংবাদিক দুবছর ধরে ফাইলগুলি ঘেঁটেছেন। দুরূহ উৎসের সন্ধান করার পাশাপাশি অনেক দেশের আদালতের এবং অন্য সরকারি নথি আঁতিপাতি করে খুঁজেছেন তাঁরা।

ফাঁস হওয়া নথিগুলি পাওয়া গেছে বিশ্বের এমন ১৪টি বিদেশে পরিষেবাদানকারী সংস্থা থেকে যারা তাদের গ্রাহকদের জন্য ভুয়ো সংস্থা খোলে এবং বিদেশে গ্রাহকদের জন্য গোপন ঘাঁটি বানায়। যাতে তাদের চাহিদামতো আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি আড়ালে রাখা যায়। এর আগে এরকমই বিদেশে থাকা নিরাপদ স্থান থেকে প্রাপ্ত নথি থেকে যতজনের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছিল এবারে প্রাক্তন ও বর্তমান মিলিয়ে দেশনেতাদের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেশি।

স্বৈরতন্ত্র ও অসাম্য যখন বৃদ্ধি পাচ্ছে এমনই এই সময়ে প্যান্ডোরা পেপারস তুলে ধরেছে অনন্য পরিপ্রেক্ষিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ধনীদেশগুলির আর্থিক গোপনীয়তা রাখার ব্যবস্থার ফলে একবিংশ শতাব্দীতে কিভাবে অর্থ ও শক্তি কাজ করে, কিভাবেই বা সারা বিশ্বে আইনের শাসন শিথিল হয় বা ভেঙে পড়ে তা এই তথ্য থেকে প্রকাশ পেয়েছে।

আইসিআইজে এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলি দেখিয়েছে বিশ্ব রাজনীতির কত গভীরে ঢুকে পড়েছে গোপন আর্থিক কার্যকলাপ। এও দেখিয়েছে কেন সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বিদেশে অর্থের এই বেআইনি লেনদেন রোধে যথেষ্ট কৃতকার্য হতে পারেনি।

গোপন নথি বিশ্লেষণ করে আইসিআইজে দেখিয়েছে বিদেশে অবস্থিত এরকম ৯৫৬টি কোম্পানি জড়িত ৩৩৬জন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক ও সরকারি আধিকারিকের সঙ্গে। এদের মধ্যে আছেন দেশনেতা, ক্যাবিনেট মন্ত্রী, রাজদূত এবং অন্যরা। কোম্পানিগুলির দুই তৃতীয়াংশের বেশি আছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে। বিদেশে আর্থিক লেনদেনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ওই জায়গা স্বর্গ বলে পরিচিত।

প্যারিসের অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ২০২০র একটি সমীক্ষা অনুযায়ী বিদেশে এই ধরনের অর্থ গচ্ছিত থাকার পরিমাণ অন্তত ১১.৩ ট্রিলিয়ন ডলার।

জটিলতা ও গোপনীয়তার জন্যই বোঝা সম্ভব নয় যে এই সম্পদের কতটা কর ফাঁকি দেওয়া থেকে বা অন্য অপরাধ থেকে প্রাপ্ত। আর এও বোঝা সম্ভব নয় এই অর্থ কতটাই বা বৈধ এবং উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সেই সম্পর্কে অবহিত।

প্যান্ডোরা পেপারসের একটি নথিতে দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বের ব্যাঙ্কগুলি তাদের গ্রাহকদের অন্তত ৩৯২৬ টি অফশোর কোম্পানি খুলতে সাহায্য করে। এতে সাহায্য করে আমেরিকায় প্রাক্তন এক রাষ্ট্রদূতের আলেমেন, কর্ডেরো, গ্যালিন্ডো অ্যান্ড লী নামে আইনি সংস্থা। নথি থেকে দেখা যাচ্ছে ওই আইনি সংস্থা যা অ্যাল্কোগাল নামেও পরিচিত, তারা আমেরিকার সবচেয়ে বড় আর্থিক পরিষেবা প্রদানকারী মরগ্যান স্ট্যানলির গ্রাহকদের জন্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অন্তত ৩১২টি কোম্পানি স্থাপন করেছে।

মরগ্যান স্ট্যানলির এক মুখপাত্র বলেছেন, 'আমরা অফশোর কোম্পানি তৈরি করি না। এই প্রক্রিয়াটি সংস্থানিরপেক্ষ এবং গ্রাহকের ইচ্ছা ও নির্দেশে হয়।'

প্যান্ডোরা পেপারস তদন্তে দেখা গেছে আমেরিকার সবচেয়ে বড় আইনি সংস্থা বেকার ম্যাকেঞ্জি কিভাবে আধুনিক অফশোর ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে এবং এখনও এই ছায়া অর্থনীতির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করে চলেছে।

আইসিআইজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেকার ম্যাকেঞ্জি এবং তাদের আন্তর্জাতিক সহযোগীরা তাদের যোগাযোগকে ও বিভিন্ন দেশের অর্থ বিষয়ক আইনের খসড়া তৈরির দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছে। প্রতারণা ও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত মানুষের জন্য কাজ করে মুনাফা করেছে।

যে সব মানুষের হয়ে কাজ করেছে তাদের মধ্যে আছে ইউক্রেনের অলিগার্ক ইহর কলোময়স্কি। মার্কিন সরকারের অভিযোগ সে একাধিক ভুয়ো কোম্পানি খুলে আমেরিকা জুড়ে কারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে ৫.৫বিলিয়ন ডলার নয়ছয় করেছে।

বেকার ম্যাকেঞ্জি ঝো লো নামে অধুনা সন্দেহজনক আর্থিক ঋণদাতার হয়েও কাজ করেছে। ঝো লোর বিরুদ্ধে একাধিক দেশের অভিযোগ, তারা ১এমডিবি নামে মালয়েশিয়ার একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন তহবিলের ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি নয় ছয় করেছে।

লো সাহায্য পেতে আস্থা রেখেছিল বেকার ম্যাকেঞ্জি এবং তার সহযোগী সংস্থার উপরে। যাতে মালয়েশিয়া ও হংকংএ অনেকগুলি কোম্পানি খোলা যায়। মার্কিন সরকারের অভিযোগ তারা এদেরই মধ্যে কয়েকটি কোম্পানিকে ব্যবহার করত ১এমডিবি থেকে লুঠ করা অর্থ সরাতে।

আইসিআইজের পানামা পেপারসের থেকে অনেক বড় এবং আন্তর্জাতিক প্যান্ডোরা পেপারস। ২০১৬য় পানামা পেপারসের জেরে বহু দেশে তল্লাশি শুরু হয় নতুন আইন তৈরি হয়। ইস্তফা দিতে হয় আইসল্যান্ড ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে।

পানামা পেপারস-এ পাওয়া গেছিল একটিমাত্র বিদেশি পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা পানামার আইনি সংস্থা মোজাক ফন্সেকার থেকে। প্যান্ডোরা পেপারস দেখিয়েছে কত ধরনের আইনজীবী ও দালাল এই অফশোর শিল্পের সঙ্গে য্যক্ত।

অফশোর কোম্পানির মালিকানা নিয়ে প্যান্ডোরা পেপারস দ্বিগুণেরও বেশি তথ্য দিয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন ফাঁস হওয়া তথ্যে ২৯০০০এর বেশি অফশোর কোম্পানির আসল মালিকদের পরিচয় প্রকাশ করেছে। এই মালিকরা ২০০টিরও বেশি দেশের। সবচেয়ে বেশি রাশিয়া, ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা এবং চীনের।

(Except for the headline, this story has not been edited by People's Reporter and is translated and published from a syndicated feed.)

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in