তৃণমূলে ফিরেই বড় দায়িত্বে মুকুল, পুত্র শুভ্রাংশু বাবার পদে! জল্পনা তুঙ্গে

এদিন সাংবাদিক বৈঠকের পর তড়িঘড়ি গোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। এদিনের বৈঠকে একগুচ্ছ প্রস্তাব ওঠে পিতাপুত্রের জন্য।
মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরা উপলক্ষ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুকুল রায়ের তৃণমূলে ফেরা উপলক্ষ্যে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলে ফিরেই বড় দায়িত্ব পেতে চলেছেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুল রায়। শুক্রবার সব জল্পনার ইতি ঘটিয়ে তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি করলেন মুকুল রায়। এদিন সাংবাদিক বৈঠকের পরই তড়িঘড়ি গোপন বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নিয়ে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। এদিনের বৈঠকে একগুচ্ছ প্রস্তাব ওঠে পিতা ও পুত্রের জন্য।

অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই বিজেপি থেকে জিতে আসা বিধায়ক পদ ছাড়তে পারেন মুকুল বলে জানা গিয়েছে। দলত্যাগ বিরোধী আইনের গেরোয় না পড়তে চাইলে বিধায়ক পদ ছাড়তে হবে তাঁকে। ফলে তাঁর জেতা আসনে নতুন করে নির্বাচন হবে। সেই আসনেই সম্ভবত অভিষেক হতে চলেছে মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের। এমনটাই দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কয়েকদিনের মধ্যেই জানা যাবে।

মুকুলের ঘর ওয়াপসির ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল যখন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল জায়াকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে বিধানসভায় শপথ গ্রহণের পরও মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন মুকুল রায়। বলেছিলেন 'যা বলব পরে বলব।' তখন থেকেই টের পাওয়া গিয়েছিল বিজেপি ছাড়ছেন মুকুল রায়। অবশেষে দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর ঘরে ফিরলেন মুকুল। কিন্তু এখন প্রশ্ন একটাই। ইতিমধ্যেই দলের দ্বিতীয় নম্বর পদে আসীন হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যা এক সময় মুকুল রায়ের ছিলো। দলীয় নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন মুকুল কে ২৪ এর লক্ষ্যে তৃণমূলের সর্বভারতীয় ব্যাপ্তির কাজে লাগানো হবে। তবে তাঁকে কাজ করতে হবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর নিচে। তাই তাঁর রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা।

রাজ্যসভায় তৃণমূলের দুটি আসন এই মুহূর্তে খালি রয়েছে। দীনেশ ত্রিবেদী এবং মানস ভুঁইয়ার আসন দুটির যে কোনও একটিতে মমতা চাইলে মুকুলকে পাঠাতে পারেন। মুকুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, মুকুল রায়কে ফের রাজ্যসভার সাংসদ করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অন্যদিকে মুকুলের হাত ধরেই এক সময় একাধিক নির্বাচনে তৃণমূলের সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে আসন্ন পঞ্চায়েত ও পুর নির্বাচনে মুকুলবাবুই হতে পারেন তৃণমূলের তুরুপের তাস। সেই সঙ্গে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মুকুল দলকে এগিয়ে দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুকুল রায়কে দলের সর্বভারতীয় বিস্তারে কাজে লাগানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দলের অন্দরে জল্পনা, মুকুলের পুত্রের ভবিষ্যত নিয়েও। শুভ্রাংশুকে কৃষ্ণনগর উত্তর এর উপনির্বাচনে প্রার্থী করা হতে পারে। গত ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বীজপুরের জয়লাভ করলেও একুশের নির্বাচনে তাঁর ভরাডুবি হয়েছে। তাই এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বিধায়কপদটি ছেড়ে দিতে পারেন মুকুল। সেক্ষেত্রে কৃষ্ণনগর উত্তরের আসনটি ফাঁকা হবে। সেখানে উপনির্বাচন হবে ছ’মাসের মধ্যে। রাজ্যের আরও কয়েকটি আসনের সঙ্গেই মুকুলের ছেড়ে দেওয়া কৃষ্ণনগর উত্তরে তখন প্রার্থী করা হতে পারে তাঁর পুত্র শুভ্রাংশুকে। এমন সম্ভাবনা নিয়ে তৃণমূলের পক্ষে এখনই কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও একান্ত আলোচনায় সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

শুভ্রাংশুকে শুধু বিধানসভায় ফিরিয়ে আনাই নয়, দলীয় সংগঠনেও তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সম্প্রতি তৃণমূল দল ও শাখা সংগঠনের দায়িত্বে বেশ কিছু রদবদল হয়েছে। রাজ্য যুব সভাপতির দায়িত্ব ছেড়ে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এক সময়ে যে পদে ছিলেন মুকুল। অভিষেকের জায়গায় যুবর দায়িত্বে এসেছেন অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। তৃণমূল সূত্রের খবর, শুভ্রাংশুকেও যুব সংগঠনে বড় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, এখনই না হলেও আগামী দিনে যুব তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি করা হতে পারে শুভ্রাংশুকে। তবে সবটাই দলের সিদ্ধান্ত।

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in