Mizoram: মণিপুর ছেড়ে দলে দলে মানুষ মিজোরামে, কেন্দ্রীয় সাহায্যের আবেদন জানালেন জোরামথাঙ্গা

মায়ানমার এবং বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের স্রোত সামলানো মিজোরামে এবার ঢল নেমেছে মণিপুর থেকে আগত উদ্বাস্তুদের। তথ্য অনুসারে, গত কয়েকদিনে মণিপুর থেকে ১২,২০০ জন উদ্বাস্তু মিজোরামে প্রবেশ করেছে।
উদ্বাস্তু রিলিফ ক্যাম্প, মিজোরাম
উদ্বাস্তু রিলিফ ক্যাম্প, মিজোরামফাইল ছবি, দ্য ওয়ারের সৌজন্যে

মণিপুরের সাম্প্রতিক হিংসার সরাসরি প্রভাব পড়ছে পার্শ্ববর্তী রাজ্য মিজোরামে। মায়ানমার এবং বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের স্রোত সামলানো মিজোরামে এবার ঢল নেমেছে মণিপুর থেকে আগত উদ্বাস্তুদের। তথ্য অনুসারে, গত কয়েকদিনে মণিপুর থেকে ১২,২০০ জন উদ্বাস্তু মিজোরামে প্রবেশ করেছে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানামারে সেনা অভ্যুত্থানের পর দলে দলে উদ্বাস্তু মিজোরামে প্রবেশ করে। পুরুষ, মহিলা এবং শিশু মিলিয়ে এই সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে। এছাড়াও দক্ষিণপূর্ব বাংলাদেশের চিটাগাং পার্বত্য অঞ্চল (Chittagong Hill Tracts) থেকে ৭০০-র বেশি মানুষ মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন।

গত বছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ সেনার সঙ্গে কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (KNA)-র সংঘাত শুরুর পর চিটাগাং অঞ্চল থেকে এই উদ্বাস্তুরা মিজোরামে চলে আসে। কেএনএ এক গোপন মিলিটারি সংগঠন, যারা চিটাগাং-এর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলে। মূলত রাঙামাটি এবং বান্দারবন অঞ্চলের চিন-কুকি জনগোষ্ঠীকে নিয়েই তাদের সংগঠন।

বাংলাদেশী আদিবাসী উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ সেনা এবং মায়ানমার আরাকান সেনা যৌথভাবে এই অঞ্চলে অভিযান চালায় এবং বহু আদিবাসীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এঁদের অনেকেই এখনও জেলে আটক আছে।

আদিবাসী উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর এক নেতা জানিয়েছেন, সেনা অভিযানের পর বহু আদিবাসী এখনও নিখোঁজ। আমরা নিজেদের গ্রামেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাদের মুসলিমরা সামাজিকভাবে বয়কট করেছে। আমার আমাদের চাষের জিনিস, হাতে তৈরি করা জিনিস বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে গেলেও মুসলিমরা আমাদের থেকে কোনোকিছু কেনে না।  

উল্লেখযোগ্যভাবে বাংলাদেশের চিন-কুকি আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং মিজোরামের মিজো-রা ‘জো’ গোষ্ঠীভুক্ত। এঁদের সংস্কৃতিও এক এবং ধর্মীয় ভাবে এঁরা সকলেই খৃস্ট ধর্মাবলম্বী।

মণিপুরের সাম্প্রতিক জাতিগত হিংসার ঘটনার পর এই জো গোষ্ঠীর মানুষের বড়োসড়ো বিপদের সম্মুখীন। যে হিংসায় এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ১২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে। এঁদের অনেকেরই বাড়ি ঘর দোকান লুট করা হয়েছে অথবা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি জ্বালিয়ে অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

মিজোরাম সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এক আবেদনে বলা হয়েছে মায়ানামার থেকে আগত মানুষজনকে উদ্বাস্তু বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং এঁদের জন্য বিশেষ কিছু তহবিলের বন্দোবস্ত করা হোক। যাতে মণিপুর, বাংলাদেশ এবং মায়ানমার থেকে আগত মানুষজনের জন্য ছাউনি ও খাবারের বন্দোবস্ত করা যায়।

মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা গত ১৬ এবং ২৩ মে প্রধানমন্ত্রীকে দু’টি চিঠি লিখে ১০ কোটি টাকা অর্থসাহায্য চেয়েছেন। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

মণিপুর, মায়ানমার এবং বাংলাদেশ থেকে আগত এইসব মানুষজন মিজোরামের ১১টি জেলার বেশ কিছু রিলিফ ক্যাম্পে থাকলেও বর্তমানে অনেকেই তাঁদের আত্মীয় অথবা বাড়ি ভাড়া নিয়ে কিংবা গির্জা সংলগ্ন অঞ্চলে বা কমিউনিটি সেন্টারে থাকছেন।  

ইতমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন এবং মণিপুরের ১০জন কুকি বিধায়ক (যাদের মধ্যে ৭ জন বিজেপির এবং বাকিরা আইটিএলএফ ও কেআইএম বিধায়ক) কুকি আদিবাসীদের জন্য পৃথক প্রশাসন এবং পৃথক অঞ্চলের দাবি জানিয়েছেন। যে প্রসঙ্গে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা জানিয়েছেন মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ১৯৬১ সাল থেকে জো জনগোষ্ঠীর জন্য মিজোরাম এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যের জো গোষ্ঠীর মানুষজন যে অঞ্চলে বসবাস করেন সেই সব অঞ্চল নিয়ে বৃহত্তর মিজোরাম গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে।

যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী একাধিকবার পৃথক প্রশাসনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করা হবে এবং কোনও অবস্থাতেই এর সাথে আপস করা হবে না।

- with inputs from IANS

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in