
বিগত কয়েকদিনের রাজনৈতিক গতি প্রকৃতিতে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের মহাবিকাশ আঘাদি সরকারের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে। যে কোনো মুহূর্তে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক পালাবদলের জল্পনা এই মুহূর্তে তুঙ্গে। যদিও শিবসেনা আবারও নির্বাচনের আগের অবস্থা মত বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধে সেক্ষেত্রে এনসিপি-র অবস্থান কী হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাবার একাধিক সম্ভাবনা বর্তমানে তৈরি হয়েছে।
রাজ্যে পালাবাদলের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিলো কিছুদিন ধরেই। বিশেষ করে অতি সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাতের পর লক্ষণীয় ভাবে দুই পক্ষেরই সুর নরম হয়। এই সময়েই প্রধানমন্ত্রীকে 'দেশের সবথেকে বড়ো নেতা' বলে উল্লেখ করেন শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউথ। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে মহারাষ্ট্রে নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করে নিতে চাইছে বিজেপিও। সেক্ষেত্রে শিবসেনার সঙ্গে সমঝোতায় যেতেও এই মুহূর্তে তাদের আপত্তি নেই।
গতকালই রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জানিয়েছিলেন, শিবসেনা বিজেপির শত্রু নয়। যে ঘোষণার পরে জল্পনার পারদ আরও চড়ে। সেই জল্পনা আরও উসকে দিয়ে সোমবার শিবসেনার পক্ষ থেকে জানানো হয় – দুই পক্ষের মধ্যে কোনো তিক্ততা নেই। বন্ধুত্ব অটুট আছে। শিবসেনা মুখপাত্র সঞ্জয় রাউথ জানান, আমরা ভারত পাকিস্তান নই। আমির খান কিরণ রাওকে দেখুন। আমাদের সম্পর্ক অনেকটা এরকমই। আমাদের রাজনৈতিক পথ আলাদা হতেই পারে কিন্তু বন্ধুত্ব অটুট আছে।
মহারাষ্ট্রে মহাবিকাশ আঘাদি ভেঙে বিজেপি যদি সরকারের শরিক হয় সেক্ষেত্রে দুই পক্ষে কী ধরণের সমঝোতা হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়। উদ্ধব ঠাকরে কোনোভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাইবেন না। অন্যদিকে বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েও পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া দেবেন্দ্র ফড়নবীশেরও মূল লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার আসন্ন সম্প্রসারণে কোনোরকমভাবে সমঝোতা করা হবে কিনা তাও এখনও স্পষ্ট নয়।
এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস বা এনসিপি-র পক্ষ থেকে এই বিষয়ে মুখ খোলা হয়নি। যদিও কদিন আগেই এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ার একান্তে বৈঠক করেছেন উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে। তারও কয়েকদিন আগে দিল্লিতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিরোধীদের এক বৈঠক ডেকেছিলেন শারদ পাওয়ার। ফলে আগামীদিনে মহারাষ্ট্রে যদি শিবসেনা-বিজেপি-এনসিপি সরকার হয় তাহলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তবে এনসিপি জোটে না থাকলেও শিবসেনা বিজেপির সরকার গঠনে কোনো অসুবিধে থাকার কথা নয়। এছাড়াও শিবসেনা বিজেপি জোট ক্ষমতাসীন হলে কংগ্রেসকে ক্ষমতার থেকে দূরে রাখার বিজেপির পরিকল্পনাও সফল হবে।
মহারাষ্ট্র বিধানসভার মোট আসন ২৮৮। ২০১৯ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে জয় পেয়েছিলো ১০৫ আসনে। শিবসেনা জয়ী হয় ৫৬ আসনে। ৫৪ আসনে এনসিপি এবং ৪৪ আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৫ আসনের চেয়ে বেশি আসন আছে শিবসেনা বিজেপির। কাজেই এনসিপি, কংগ্রেসকে বাদ দিয়েই জোট হতে পারে শিবসেনা বিজেপির মধ্যে।
রাজনৈতিক মহলের মতে আগামী বছর বিএমসি এবং থানে সহ আরও ১০টি পুরসভার ভোট আছে মহারাষ্ট্রে। বিজেপি বা শিবসেনা কেউই এই নির্বাচনে মুখোমুখি লড়াই করতে চাইছে না। তাই তার আগে দুই দলের সম্পর্কের পুনর্বিন্যাস হতেই পারে। সেক্ষেত্রে মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী বদল না হলেও জোটের হাতছাড়া হতে পারে আরও একটি রাজ্য। ঠিক যেভাবে এর আগে কর্ণাটক বা মধ্যপ্রদেশে সরকার বদল হয়েছে বিজেপির প্রত্যক্ষ মদতে দল ভেঙে। রাজস্থানে সেই চেষ্টা এখনও পর্যন্ত সফল না হলেও সেখানেও কংগ্রেসের পক্ষে অবস্থা খুব একটা স্বস্তির নয়। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রেও কি নিঃশব্দে বদলে যাচ্ছে জোট? উত্তর পেতে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন