
গ্রীষ্মের মরশুমে আমের পাশাপাশি বাঙালির আরেক প্রিয় ফল হল লিচু। কিন্তু জানেন কি, লিচুর মধ্যে এমন কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে, যা শরীরে গেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এমনকি ২০১১ সালে বিহারে লিচু থেকে এনসেফেলাইটিসের সংক্রমণ ঘটে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। তাই লিচু খাওয়ার আগে সাবধান থাকাটা জরুরি। বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে। ভাল করে পরখ করে কেনা জরুরী।
লিচুর উপকারিতা -
লিচুর মধ্যে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। এছাড়া লিচুতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, যা শরীরের জন্য ভালো। লিচুতে রয়েছে অলিগোনল, যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে মানব দেহের হার্টে রক্ত চলাচল ভালো হয়, স্বাভাবিক থাকে রক্ত চাপ।
পাশাপাশি লিচুতে ফাইবার বেশি থাকে। এই কারণে লিচু খেলে রক্তে শর্করা বেড়ে যাওয়ার ভয় নেই। এছাড়া লিচুতে ক্যালোরি কম থাকায় চট করে ওজন বাড়তে পারে না। ডাক্তাররা বলছেন, এক কাপ লিচুতে ক্যালোরি থাকে ১২৫। লিচুতে রয়েছে ফ্ল্যাভেনল, যা শরীরে রক্তপ্রদাহ কমায়।
লিচুর ক্ষতিকর প্রভাব -
তবে লিচুতে রয়েছে হাইপোগ্লাইসিন এ ও মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (এমসিপিজি), যা বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষক্রিয়া দেখ দিতে পারে। 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’ প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী, অধিক পরিমাণ লিচু খাওয়া ও খালি পেটে লিচু খাওয়া - এই দুই কারণের ফলে রাসায়নিকের প্রভাবে শরীরে শর্করা বৃদ্ধি পেতে পারে। যা থেকে দেখা দেবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। এর ফলে জ্বর, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি, মাথা যন্ত্রণা, মস্তিষ্কে প্রদাহ হতে পারে। এমনকি খাদ্যনালিতেও সংক্রমণ হতে পারে। যা বাড়াবাড়ি হলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এছাড়া লিচুর ফলে লিভারে রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যাঁদের লিভারে কোনও সমস্যা বা জটিল রোগ রয়েছে, তাঁদের লিচু খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লিচু কেনার সময় কোন কোন জিনিসটি লক্ষ্য রাখা উচিত -
লিচু অবশ্যই পাকা কেনা উচিত। কারণ আধা পাকা বা পচন ধরে যাওয়া লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন এ-র মাত্রা বেশি থাকে। যার ফলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। এমনকি লিচুর বীজ ও শাঁসে এমসিপিজি রাসায়নিক থাকে। এর ফলে এনসেফেলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
কোন সময় এবং কীভাবে খাওয়া উচিত লিচু -
দিনের বেলায় কিছু খাবার পর লিচু খেতে পারেন। তবে বিকেলের পর লিচু খাবেন না। এছাড়া খালি পেটে লিচু খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। কোনও শিশুর যদি অ্যালার্জি বা অপুষ্টিজনিত রোগ অথবা কোনও ক্রনিক অসুখ থাকে, তাহলে লিচু না খাওয়াই ভালো। একজন ব্যক্তি দিনে ৭-৮ টি লিচু খেতে পারেন। আর ডায়াবিটিস থাকলে ৬ টার বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন