২৬-এর দোরগোড়ায় এসে স্তব্ধ হয়ে গেল রাজার জীবন। আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটার দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্র ছিল রাজার ঠিকানা। রবিবার রাত তিনটে নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হল দেশের সবচেয়ে প্রবীণ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রাজার।
প্রায় দুবছর আগে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল রাজাকে। সেখানেই গতবছর ২৩ আগস্ট ধুমধামের সাথে পালন করা হয়েছিল রাজার ২৫তম জন্মদিন। এবারও ২৬তম জন্মদিনের তোড়জোড় চলছিল বনদপ্তর তরফে। কিন্তু তার আগেই থমকে গেল রাজার জীবন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর ১০ মাস ১৮ দিন। রাজার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
সোমবার ফুলসজ্জায় সজ্জিত রাজার মৃতদেহকে অন্তিম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন জলদাপাড়া ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার দীপক.এম, আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মীনা সহ বনবিভাগের সমস্ত আধিকারিক ও কর্মীরা।
২০০৬ সালে সুন্দরবনের মাতলা নদী পারাপারের সময় এক বিশালাকার কুমিরের আঘাতে জখম হয় এই বাঘটি। তার শরীরের ১০টি জায়গা ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, তার বাম পায়ের অনেকটা অংশও গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে জলদাপাড়া বনবিভাগের খয়েরবাড়ি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ একমাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠে সে। তার নামকরণ করা হয় রাজা। খয়েরবাড়িতে শুরু হয় রাজার রাজ্যপাট।
বনদপ্তর সূত্রের খবর, একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সাধারণত ২০ বছর বাঁচে। সেই জায়গায় রাজা ২৫ বছরের বেশি জীবন অতিক্রান্ত করেছে। যা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। রাজার জীবন থেকে ব্যাঘ্র প্রজাতি সম্পর্কে অনেক তথ্য ও শিক্ষা পাবে বনদপ্তর। ভবিষ্যতে ‘বিগক্যাট’ সংরক্ষণে রাজার অতিবাহিত জীবন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরবে বলে দাবি বন দপ্তরের।
প্রসঙ্গত, খয়েরবাড়ি কেন্দ্রে রাজাই ছিল শেষ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আধিকারিকদের থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, একদা সার্কাস থেকে বাজেয়াপ্ত করে ১৮টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আনা হয়েছিল এখানে। তার মধ্যে ৪টিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দার্জিলিং চিড়িয়াখানাতে আর বাকিগুলি জলদাপাড়াতেই ছিল। তবে সময়ের সাথে একে একে তারা সকলেই মারা যায়। জীবিত ছিল একমাত্র সুন্দরবন থেকে নিয়ে আসা রাজা। এই রাজাকে দেখতে পর্যটকরা ভিড় করত খয়েরবাড়িতে। সেও খয়েরবাড়ি খালি করে চলে গেল। শুধু দেশের নয় রাজা ছিল বন্দিদশায় বিশ্বের সবচেয়ে বৃদ্ধ রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন